ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আইএসএল-এ (Mohunbagan ISL 2024-2025) রেফারিং বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। চলতি আইএসএলে (Mohunbagan ISL 2024-2025) রেফারিরদের একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। একাধিক ম্যাচে ভুল রেফারিঙের শিকার হয়ে পয়েন্ট খোয়াতে হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে ইস্টবেঙ্গল। শনিবার গুয়াহাটিতে কলকাতা ডার্বিতেও পিছু ছাড়লো না রেফারিং বিতর্ক। ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হল ইস্টবেঙ্গল। জেমি ম্যাকলারেনের একমাত্র গোলে আবারও ডার্বি জিতল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তবে ইস্টবেঙ্গল ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত না হলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতেই পারত। ম্যাচ শেষে আবারও রেফারিং নিয়ে সরব হল ক্ষুব্ধ ইস্টবেঙ্গল শিবির।
গঙ্গাসাগর মেলার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় দু’দিন আগেই যুবভারতী থেকে আইএসএল-এর ফিরতি কলকাতা ডার্বি সরেছিল গুয়াহাটিতে। পয়েন্ট টেবিলে ১১ নম্বরে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের থেকে ধারে-ভারে অনেকটাই এগিয়েছিল দুরন্ত ফর্মে থাকা মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাই শনিবার গুয়াহাটিতে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিলেন শুভাশিস বোস, লিস্টন কোলাসো, জেমি ম্যাকলারেনরা। আর সেটা যে শুধু খাতায় কলমে নয় তা ম্যাচের দেড় মিনিটের মধ্যেই প্রমাণ হয়ে যায়। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। লম্বা থ্রু পাস বাড়ান মোহনবাগানের আশিস রাই। সেই পাস ধরে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ফাঁক দিয়ে গোল করে মোহনবাগানকে শুরুতেই এগিয়ে দেন জেমি ম্যাকলারেন। আর সেই সঙ্গে ইতিহাসের পাতাতেও নাম লিখিয়ে ফেলেন সবুজ মেরুনের অজি বিশ্বকাপার। আইএসএল ডার্বির ইতিহাসে শনিবার ম্যাকলারেনের গোলটাই দ্রুততম গোল।

ডার্বির মতো বড় ম্যাচে শুরুতেই গোল খেয়েও সাময়িক তাল কাটলেও পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ক্লেইটন সিলভা। বক্সের মধ্যে জটলার ভিতর থেকে বল পেলে সবুজ-মেরুণ গোলরক্ষক বিশাল কাইথকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ক্লেইটন। উল্টোদিক, ম্যাচের ২১ মিনিটে মোহনবাগানের কাছেও দ্বিতীয়বার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল। বক্সের মধ্যে থেকে কামিংসের মাইনাস ধরে গোল করতে ব্যর্থ হন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা মনবীর সিং। ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল বলটা সেভ করে নিশ্চিত দুর্গপতন আটকে দেন। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ও গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মনবীর। কিন্তু বল তেকাঠির ভিতরে রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। ‘বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলের মতো’ আকাশে উড়িয়ে দেন বল।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/weather-forecast-predicts-a-slight-increase-in-temperature-from-next-week/
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়েই ম্যাচের বিতর্কিত মুহূর্ত। বক্সের ভিতরে বল পেয়ে ইস্টবেঙ্গলের পিভি বিষ্ণু শট নেন সবুজ-মেরুণ গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু গা দিয়ে বল ব্লক করতে গিয়ে হাতে লাগান সবুজ-মেরুণের আপুইয়া। লাল-হলুদ ফুটবলাররা হ্যান্ডবলের আবেদন জানালেও রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি। ফলে নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয় ইস্টবেঙ্গল। কারণ রিপ্লেতেও বারবার স্পষ্ট দেখা গিয়েছে বল আপুইয়ার হাতে লেগেছে। সেই সময় পেনাল্টিটা পেলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতেই পারতো। ফলে প্রথমার্ধের ফলাফলে আর কোনও পরিবর্তন হয়নি। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে মোহনবাগান। মাঝে ইস্টবেঙ্গল আরও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও ফিনিশ করতে পারেনি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নজর কাড়লেন পিভি বিষ্ণু। তাঁকে যেমন আক্রমণে দেখা যাচ্ছিল, তেমনই রক্ষণেও। বক্স থেকে বক্সে খেলছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/wb-gov-take-special-initiative-on-gangasagar-mela-2025/
এক গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে নেমে সমতা ফেরাতে শুরু থেকেই চাপ বাড়াতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। আর তখনই আসে বড় ধাক্কাটা। ৬৪ মিনিটে লিস্টন কোলাসোকে ফাউল করে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখায় সৌভিক চক্রবর্তীকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ফলে ম্যাচের শেষ ২৬ মিনিট (পাঁচ মিনিট অতিরিক্ত সময় ধরলে প্রায় আধ ঘণ্টা) দশজনে খেলতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। একে তো এক গোলে পিছিয়ে থাকা, তার উপর বড় ম্যাচে একজন খেলোয়াড় কমে যাওয়ায় সবদিক থেকেই চাপে পড়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ফলে পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হতে হয় ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁকে। তবুও মাঝে মাঝেই কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে ম্যাচের সমতা ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা করেছে লাল-হলুদ ফুটবলাররা। রক্ষণের ফুটবলার তুলে আক্রমণভাগের ফুটবলার নামান কোচ ব্রুজোঁ। ফলে শেষ দিকে তাদেরই আক্রমণ বেশি ছিল। এক জন ফুটবলার বেশি থাকলেও চাপ বাড়ছিল বাগানের উপরই। প্রায় পুরো খেলাই হচ্ছিল সবুজ-মেরুন অর্ধে।
কিন্তু, সংখ্যাতত্ত্বে পিছিয়ে থাকা এবং হাফ চান্সকে কাজে লাগাতে না পারার মাসুল গুনতে হল মশাল বাহিনীকে। ব্রহ্মপুত্রের তীরে পালতোলা নৌকার দাপটে আবারও আইএসএলে মশাল নিভল। এবং ১-০ গোলে মোহনবাগান জেতায় আইএসএলে ডার্বির রং সবুজ মেরুণ রইল। আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলা ১০টি ডার্বির মধ্যে ন’টিই জিতল মোহনবাগান।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/peacock-roaming-at-village-in-aushgram-freely/
এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রইল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরেই থাকলো ইস্টবেঙ্গল। শনিবার আইএসএল-এর অপর ম্যাচে টেবিলে দু’নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-কে ১-০ গোলে হারিয়ে বড় অঘটন ঘটায় মহমেডান। আর তাতেই সোনায় সোহাগা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। ১৫ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ২ নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে মোহনবাগানের পয়েন্টের ব্যবধান আরও বেড়ে দাঁড়ালো ৮।