ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মোসাদের অনুপ্রবেশের (Mossad infiltration fear in Iran) আশঙ্কায় ইজরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে ইরান কয়েক ডজন সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীতে ২৮ জন এবং ইসফাহানে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরানি ফেসিলিটিগুলিতে ইজরায়েলি হামলার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায়, সরকার জনসাধারণকে সন্দেহজনক কার্যকলাপের খবর জানাতে আহ্বান জানিয়েছে।
ইজরায়েলের হামলার পর নিরাপত্তা আতঙ্কে ইরান (Mossad infiltration fear in Iran)
ইজরায়েলের নজিরবিহীন হামলা ও মোসাদের গোপন অপারেশনের পর ইরান জুড়ে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি ও দমন অভিযান (Mossad infiltration fear in Iran)। দেশটির সরকার এখন সন্দেহভাজন গুপ্তচরদের খোঁজে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। জনগণকে বলা হচ্ছে, যদি কেউ ‘রাতে মাস্ক, হ্যাট, বা সানগ্লাস পরে’, তাহলে যেন তা সন্দেহজনক মনে করে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করা হয়।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রাজধানী থেকে ২৮ জন গ্রেফতার (Mossad infiltration fear in Iran)
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি বিমান হামলার পর তেহরানে ২৮ জনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ইরান প্রশাসন (Mossad infiltration fear in Iran)। সোমবার দুই বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া একজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এটা ইজরায়েলের হয়ে কাজ করা অন্যদের জন্য স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। শুধু রাজধানী নয়, ইসফাহান শহর থেকেও অন্তত ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই শহরেই ইজরায়েল একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে খবর।
অনলাইনে ইজরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল পোস্টেও শাস্তি (Mossad infiltration fear in Iran)
শুধু গুপ্তচর নয়, যারা অনলাইনে ইজরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল পোস্ট করছে, তাদেরও ‘সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষতি করার’ অভিযোগে আটক করা হচ্ছে।
সন্দেহ হলে রিপোর্ট করুন, বলছে গোয়েন্দা মন্ত্রক
ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রক এক নির্দেশিকায় জনগণকে জানিয়েছে, যদি কেউ অচেনা ব্যক্তি দেখেন যারা ‘মাস্ক, সানগ্লাস পরে, পিকআপ ট্রাক চালায়, বড় ব্যাগ বহন করে, কিংবা সেনা বা শিল্পাঞ্চলের আশেপাশে ভিডিও করে’, তাহলে যেন তখনি রিপোর্ট করা হয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রচার বাড়ছে, নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ
রাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ একটি পোস্টার প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘রাতে মাস্ক, হ্যাট, সানগ্লাস পরে যারা ঘোরে’, বা যাদের বাড়িতে ‘বারবার কুরিয়ার এসে পার্সেল দিয়ে যায়’, তাদের সন্দেহ করুন। এমনকি বাড়ির ভিতর থেকে যদি ‘চিৎকার, ধাতব যন্ত্রের আওয়াজ বা লাগাতার শব্দ আসে’, অথবা ‘দিনের বেলাতেও পর্দা টানা থাকে’, সেসবও সন্দেহজনক। অন্য একটি সরকারি পোস্টারে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পর বাড়িওয়ালাদের বলা হয়েছে, তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানান।
সাংবাদিকদের উপরও কড়াকড়ি, পথে ছবি তোলা নিষিদ্ধ
সাংবাদিকদের ওপরও নজরদারি বাড়ছে। তাদের জানানো হয়েছে, প্রকাশ্যে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়ক বাহিনী ‘বাসিজ’ সদস্যদের রাতের পাহারায় নামানো হয়েছে। মহিলা মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে আন্দোলনের পর ইরান প্রশাসন আগেই নড়েচড়ে বসেছিল। এবার মোসাদ-হামলার তথ্য ফাঁস হতেই নতুন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
মোসাদের গোপন অপারেশন: ইরানে ঢুকে ড্রোন ঘাঁটি, সুনির্দিষ্ট হামলা
ইজরায়েলের বিখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি, সন্ত্রাস দমন ও গোপন মিশনে তারা পারদর্শী। নাজি অপরাধী অ্যাডলফ আইখম্যানকে ধরা থেকে শুরু করে প্যালেস্টিনিয় জঙ্গি ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঠেকানোয় এদের বড় ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: Ayatollah Ali Khamenei: ‘যুদ্ধ শুরু!’ ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ প্রস্তাবের পরেই হুঙ্কার খামেনেই-র
২০২৫ সালের জুন মাসে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অধীনে মোসাদের এজেন্টরা ইরানের কেন্দ্রে ঢুকে অস্ত্র পাচার করে এবং তেহরানের কাছে একটি ড্রোন ঘাঁটি তৈরি করে। এরপর ইজরায়েলের বিমানবাহিনী সেই ঘাঁটি ব্যবহার করে একাধিক সমন্বিত হামলা চালায়, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বেশ কিছু জেনারেল ও বিজ্ঞানীকে হত্যা করে।
নতুন ভিডিয়ো
সম্প্রতি মোসাদ একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে, যেখানে তেহরানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার ফুটেজ দেখানো হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ইরানের গোপন পারমাণবিক দলিল চুরি করে আনা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার সঙ্গেও মোসাদের যোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়। ইরান এখন যেন বিস্ফোরণের আগের বেলুন। একদিকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, অন্যদিকে বাইরের হুমকি, দু’দিক সামলাতে গিয়ে চূড়ান্ত সতর্কতা ও দমননীতির আশ্রয় নিচ্ছে দেশটির সরকার।