ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাড়ির সদস্যের মৃত্যু হলে (Mundan Ritual) মুণ্ডন করার প্রথা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আচার। এই প্রথার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং শোক প্রকাশের একটি উপায়। মুণ্ডন এক ধরনের শোকের প্রকাশ, যেখানে মৃতের পরিবার বা আত্মীয়রা শোকাহত অবস্থায় মাথার চুল কেটে ফেলেন, যা সাধারণত এক বছরের জন্য করা হয়। এর মাধ্যমে মৃত্যুর শোক ও আত্মার শান্তির জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করা হয়।
কেন করা হয় মুণ্ডন? (Mundan Ritual)
প্রথমত, মুণ্ডন করার প্রথাটি মূলত হিন্দু ধর্মের (Mundan Ritual) সাথে সম্পর্কিত। হিন্দু ধর্মমতে, মৃত্যুর পর মুণ্ডন করা একটি আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মৃতের আত্মার শান্তির জন্য করা হয়, যাতে তারা পরবর্তী জন্মে ভালোভাবে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারেন। মৃতের আত্মার শান্তির জন্য পরিবারের সদস্যরা শুদ্ধির জন্য মুণ্ডন করে, এবং তাদের জন্য পবিত্রতা লাভের আশায় এটি করা হয়। এটি একটি ধর্মীয় বিধি বা আচার, যা মৃত ব্যক্তির আত্মার পবিত্রতার জন্য প্রয়োজনীয় মনে করা হয়।
শোক প্রকাশের উপায় (Mundan Ritual)
আরেকটি কারণ হল, মুণ্ডন শোক প্রকাশের (Mundan Ritual) একটি উপায়। পরিবারের সদস্যরা যখন তাদের প্রিয়জনকে হারান, তখন তাদের শোক প্রকাশের জন্য নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মুণ্ডন সেই শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কাজ করে। এই সময় চুল কেটে ফেলা মানে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং পরিবারে শোকের পরিবেশ তৈরি করা। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের শোককে মানসিকভাবে শুদ্ধ করে তোলেন, যেন তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন।
আরও পড়ুন: Husband-Wife Relation: চাণক্যের মতে এসব কথা জীবনসঙ্গীকেও ‘না’ কী কী কথা? দেখে নিন এক ঝলকে
মোক্ষ লাভ (Mundan Ritual)
আত্মার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম হলো তার চুল। যদি আত্মা চায়, সে যাতে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে এবং আমাদের পাশে থাকতে পারে, তবে সে মোক্ষ লাভ করতে পারে না। চুলের মাধ্যমে আত্মা আমাদের আকর্ষণ করে এবং তার পল্লব বা মুক্তি লাভের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণেই, মুখাগ্নি দেওয়া ব্যক্তি তার শেষকৃত্য সম্পাদনের আগে চুল ত্যাগ করে এবং মুন্ডন করে। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না এবং তার মোক্ষ লাভ হয়।
বৈজ্ঞানিক কারণ
মৃত্যুর পর শবদেহের সাথে সম্পর্কিত কিছু রীতি এবং প্রথা আসলে শরীর এবং পরিবেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই তৈরি হয়েছে। মৃত ব্যক্তির দেহে জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে, এবং সেগুলি জীবিত মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শবদেহ দাহ করার পর বিভিন্ন পরিস্কার এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রক্রিয়া যেমন মাথা মুণ্ডন, নখ কাটা, স্নান করা, রোদে বসা ইত্যাদি কিছুটা জীবাণু মুক্তির প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি
এগুলি কেবলমাত্র স্বাস্থ্যগত দিক নয়, এটি মানুষের মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান জানানো এবং জীবিত মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া এক ধরনের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি যা সমাজে বহুল প্রচলিত।
শোক কাটিয়ে ওঠার উপায়
এছাড়াও, মুণ্ডন প্রথা মৃত্যুর পর এক ধরনের পবিত্রতা অর্জনও নির্দেশ করে। এটি মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য এবং জীবিতদের শুদ্ধির লক্ষ্যে পালন করা হয়। মুণ্ডনের পর, পরিবারের সদস্যরা কিছুদিন শান্তি ও শুদ্ধতার অবস্থা বজায় রাখেন এবং ধীরে ধীরে শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন। এই প্রথা সমাজের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য এবং সম্পর্কের মজবুতির প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। মুণ্ডন করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে সহানুভূতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।