Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র বললেই প্রথম কী মাথায় আসে (Nandan)? হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টরিয়া তারপর নন্দন! কি তাই … “এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা”— কলকাতা শুধু মানুষকে বাঁচায় না, মানুষকে ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায় ( cinema)। সেই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নিঃসন্দেহে নন্দন। হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, নন্দন—শহরের নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এদের অস্তিত্ব। তবে নন্দন শুধু একটা প্রেক্ষাগৃহ নয়, একটা সংস্কৃতির চত্বর, যা জন্ম থেকেই হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্র-প্রেমীদের মিলনক্ষেত্র। যা ভালোথাকার নামে লিপিবদ্ধ।
নন্দনের জন্ম (Nandan)
১৯৮৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল নন্দনের জন্ম (bengali cinema)। দিনটি কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে মাইলফলক। উদ্বোধন করেছিলেন মহৎ চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। নন্দনের নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। শুধু নাম নয়, প্রেক্ষাগৃহের বাইরে আজও যে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি চোখে পড়ে—‘নন্দন’—তাও তাঁর হাতের সৃষ্টি।
নন্দন ১-এর পর্দায় প্রথম ছবি ভেসে উঠেছিল ঋত্বিক ঘটকের অমর সৃষ্টি “যুক্তি তক্কো আর গপ্পো”। এর মধ্য দিয়েই যেন ঘোষিত হয়েছিল—নন্দন হবে সেই মঞ্চ, যেখানে সিনেমা কেবল বিনোদন নয়, বরং চিন্তার, বিতর্কের এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাবে।
উৎসবের প্রাণকেন্দ্র (Nandan)
১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ( cinema)। তখন থেকেই প্রতি বছর নভেম্বর মাসে নন্দন চত্বর রূপ নেয় এক উৎসবের নগরীতে। নানা রঙের আলো, থিম-ভিত্তিক সজ্জা, সারা পৃথিবী থেকে আসা সিনেমাপ্রেমী ও চলচ্চিত্রকারদের ভিড়—সব মিলিয়ে যেন মায়াময় এক পরিবেশ। কলকাতার রাস্তায় তখন ভেসে বেড়ায় শুধু সিনেমার জাদু।
নন্দনের সংস্কার ও ঐতিহ্য (Nandan)
২০১৯ সালে নন্দনকে নতুন রূপ দেওয়া হয়। উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক পর্দা, আরামদায়ক বসার আসন—সব মিলিয়ে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রেক্ষাগৃহ। তবে ঐতিহ্য রক্ষা করাই নন্দনের মূল লক্ষ্য। একসময় ২ সেপ্টেম্বর, নন্দনের জন্মদিনে, প্রেক্ষাগৃহ খোলা থাকত সবার জন্য। বিনা টিকিটে দেখানো হতো বাংলা সিনেমার ক্লাসিক ছবি। দর্শক আর সিনেমার মধ্যে তৈরি হতো এক অনন্য সম্পর্ক।
স্থাপত্যের বিশেষত্ব (Nandan)
নন্দনের প্ল্যান ও ডিজাইন করেছিলেন সেনগুপ্ত অ্যান্ড সেনগুপ্ত কোম্পানি। তত্ত্বাবধান করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পিডব্লিউডি বিভাগ। কলকাতার ডি. পি. কুমারের হাত ধরে শেষ হয়েছিল এই স্বপ্নের স্থাপত্য। নন্দনের চারপাশের জলাশয় শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়—এটির একটি বাস্তব প্রয়োজনীয়তা আছে। শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন ও নন্দন—এই পুরো সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের মধ্যে যদি কখনও অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তবে এই জল ভাণ্ডারই হবে প্রাথমিক ভরসা। স্থাপত্য ও নিরাপত্তার এই দূরদর্শিতা প্রমাণ করে, নন্দন শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, পরিকল্পিত একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

আরও পড়ুন:Rituparno Ghosh: সিনেমার ফ্রেমে সমাজবদলের আলো জ্বালানো এক শিল্পী!
আজকের নন্দন! (Nandan)
মাল্টিপ্লেক্সের যুগে মানুষের সিনেমা দেখার অভ্যাস বদলেছে। কিন্তু তবুও নন্দন মানেই আড্ডা, তর্ক, রাজনীতি, প্রেম, সাহিত্য আর সিনেমা। এখানে ক্যাম্পাসের ধারে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলে—কখনও কুস্তুরিকার সিনেমা নিয়ে, কখনও গদাধরী সাভিত্রীর নাটক নিয়ে, আবার কখনও নিছক প্রেমের কবিতা নিয়ে।
নন্দন আজও বাঙালির ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক। এটি শুধু প্রেক্ষাগৃহ নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক আঙিনা, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের গর্ব। সত্যজিৎ রায়ের সেই প্রথম দিনকার স্বপ্ন এখনও অটুট—নন্দন থাকবে, জ্বালাবে আলো, আর বলবে—“এই শহরের মধ্যে আছে আরেকটা শহর, নাম তার নন্দন।”