ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ১৮ জুলাইয়ের দুর্গাপুর সফরকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। তবে এই সফর নিয়ে জোরালো প্রচারের অভাবেই দলের অন্দরে ক্ষোভ স্পষ্ট। মিছিল, পথসভা, বড় মাপের প্রচার কিছুই তেমনভাবে হয়নি। ফলে মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সভার বার্তা পৌঁছে দিতে বিজেপি নেতৃত্বকে এখন হাতিয়ার করতে হচ্ছে ‘ঘরে ঘরে আমন্ত্রণপত্র’ বিলির পন্থা।
বুধবার এই কর্মসূচিতে গোপালমাঠ এলাকায় নেমেছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই-সহ অন্যান্য নেতারা। প্রায় ৩০টিরও বেশি বাড়িতে গিয়ে তাঁরা হাতে তুলে দেন আমন্ত্রণপত্র। লক্ষ্য একটাই— আগামী শুক্রবারের সভায় সাধারণ মানুষকে টেনে আনা। যদিও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— এই উদ্যোগে কতটা সাড়া মিলবে?
জেলার নেতাদের অসন্তোষ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যস্ততা (Narendra Modi)
বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে বৈঠক ও সভাস্থল পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকলেও, জেলার নেতারা এই নিয়ে ক্ষুব্ধ। কারণ, তাঁদের মতে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর নিয়ে প্রচারে কার্যত ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে। মিডিয়ার মাধ্যমে খবর ছড়ালেও, বিজেপির তরফে মাঠে নেমে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার কার্যত অনুপস্থিত।
আরও পড়ুন: Nabanna on WB Flood Situation: বন্যা মোকাবেলায় তৎপর রাজ্য, দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
এই প্রসঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দামামা ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) দুর্গাপুর সফর বাংলার রাজনীতিতে বড় চমক হতে চলেছে।” তিনি আরও জানান, গোপালমাঠের মানুষকে সভায় আহ্বান জানাতেই এই উদ্যোগ।

তবে প্রচারে খামতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই বড় কর্মসূচি হচ্ছে। তাই বৃহৎ আকারে প্রচার শুরু হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক জেলায় একযোগে প্রচার শুরু হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর (Narendra Modi) ‘মেগা ইভেন্ট’-এর বিস্তারিত সূচি
১৮ জুলাই, শুক্রবার দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর দুটি কর্মসূচি রয়েছে। প্রথমত, সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং দ্বিতীয়ত, একটি বিশাল জনসভা— দুই-ই অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে। ওই দিন সকালেই বিহারের অণ্ডাল বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে গান্ধীমোড় পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই শুরু হবে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘অঘোষিত’ রোড শো, যার শেষ গন্তব্য নেহরু স্টেডিয়াম।
আরও পড়ুন: TMC Mega Rally: বাঙালিদের হেনস্তার প্রতিবাদে আজ রাজপথে মমতা-অভিষেক, যানজটের আশঙ্কা
বিজেপির পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকবেন, ফুল ছুঁড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি স্টেডিয়ামে পৌঁছে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে—
- ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প
- ডিভিসির রঘুনাথপুর ও মেজিয়ার কারখানার সম্প্রসারণ
- গেলের আসানসোল-কলকাতা গ্যাস পাইপ লাইন
- দক্ষিণবঙ্গের গৃহস্থালিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প
- জাতীয় সড়কে একাধিক আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজ
- দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (DSP)-এর আধুনিকীকরণ
এই সব প্রকল্প উদ্বোধনের পরেই প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi) জনসভায় ভাষণ দেবেন। সভাশেষে, নেহরু স্টেডিয়ামের লাগোয়া অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের মাঠে তৈরি হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে ওঠেন তিনি। সেখান থেকে আবার অণ্ডাল বিমানবন্দর হয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন।
আরও পড়ুন: Migrant Workers: বাংলা বলার অপরাধে পুশব্যাক! কেন্দ্রের কাছে হলফনামা তলব হাইকোর্টের
সফর সফল করতে রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা বৃহস্পতিবার দিনভর দুর্গাপুরে থাকবেন। থাকছে সভাস্থল পরিদর্শন, কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক, এবং প্রচার কৌশল নির্ধারণ। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— মাত্র এক দিনের প্রচারে, এবং বাড়ি বাড়ি আমন্ত্রণপত্র বিলির মাধ্যমে, এই ‘মেগা ইভেন্ট’-এ কতটা ভিড় জড়ো করতে পারবে বিজেপি?