রূপম রায়, নদীয়া: আপামর বাঙালি তথা বিশ্ববাসী মেতে উঠেছে দেবী দুর্গার আরাধনায়। কোথাও কোথাও পুজোর আমেজ শুরুও হয়ে গেছে। সম্প্রতি দূর্গা পুজোকে ঘিরে উঠে এসেছে নানা আধুনিক বৈচিত্র্য, সেটা মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা সবেতেই। কোথাও থিমের ছোঁয়া তো কোথাও সাবেকিআনা। সকলেই সকলকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত।
এমতাবস্থায় একদম ভিন্ন ভাবনায় পুজোর আয়োজন করেছে নদীয়ার নবদ্বীপ ব্লকের চরমাঝদিয়া পুরাতন পোষ্ট অফিস পাড়া বারোয়ারি পুজো কমিটি। তাদের পুজোটা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। প্রথম থেকেই ভিন্ন ভাবনায় পুজো তুলে ধরে আসছেন তারা। হয়তো নেই সেভাবে আধুনিকত্বের ছোঁয়া, নেই বিলাসিতা, কিন্তু তাদের ভাবনাটাই সম্পূর্ণ আলাদা সকলের থেকে এবং তাদের এই ভাবনা নদীয়া জেলায় একমাত্র ও প্রথম বলেও দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি পুজো উদ্যোক্তারা জানান, তাঁদের প্রতিদিন চলে প্রসাদ বিতরণ সহ নানাবিধ অনুষ্ঠান। এর সাথে প্রায় এক হাজার মানুষের মধ্যে করা হয় নতুন বস্ত্র ও শীত বস্ত্র বিতরণ।
আরও পড়ুন: https://tribetv.in/the-search-for-durga-pujo-dhaka-brought-noor-islam-home-from-birbhum/
এখানে পূজিত হয় নবদুর্গা অর্থাৎ দেবী দুর্গার নয় রূপ একসাথে পুজো হয়। আমরা সচরাচর দেবী দুর্গার একটি মূর্তি দেখি। সাথে থাকে তার পরিবার তথা লক্ষী, গনেশ, সরস্বতী, কার্তিক। কিন্তু দেবীর এই রূপ ছাড়াও আরও অনেক রূপ আছে, যেটাকে নবদুর্গা বলে। নবদুর্গা বলতে আভিধানিক পার্বতীর দুর্গার রূপের ভাবে দেবী নয়টি রূপকে বোঝানো হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে এগুলো দেবী পার্বতীর নয়টি ভিন্ন রূপ। এই নয় রূপ হল যথাক্রমে শৈলকন্যা, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী। নবরাত্রির নয় দিনে প্রতিদিন দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপের এই নবরূপের এক একজনকে পূজা করা হয়। আসলে এই নয়টি রূপের সব গুন বর্তমান দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপে। যেই রূপে দেবী পার্বতী বধ করেন হিরণ্যাক্ষাসুরের বংশধর অসুররাজ দুর্গমাসুরকে। দেবী দুর্গার অপর নাম দুর্গতিনাশিণী।
পুজো কমিটির সভাপতি ভোলানাথ সাহা বলেন, আমরা সকলেই প্রতিযোগিতার নেশায় না দৌড়ে ভক্তদের সামনে মায়ের সব কটি রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছি। গত কয়েক বছরে লোক মুখে নবদুর্গা পুজোর প্রচার হওয়ায় দর্শকের ভিড়ও হয় চোখে পড়ার মতো। মৃৎশিল্পী উত্তম দেবনাথ জানান, আমি বাংলার বাইরে নবদুর্গা তৈরি করেছি কিন্তু নদীয়া তথা এই রাজ্যে এই প্রথম তৈরী করছি। পুজো উদ্যোক্তাদের ভিন্ন ভাবনায় ও তার নিপুণ শিল্প কলায় ভক্ত তথা দর্শকদের টানবে বলেও আশাবাদী। ভোলানাথ সাহা আরও বলেন, পুজোর কটা দিন গোটা এলাকাবাসী সকলে একসাথে পুজোর আনন্দ উপভোগ করে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন সকলের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়, দশমীতে মৎস্যমুখ করা হয়।
আরও পড়ুন:https://tribetv.in/gautam-saha-of-nabadwip-made-a-1cm-durga-idol-with-clay-on-the-nib-of-a-pen/
সব মিলিয়ে প্রচারের আলোয় না আসতে পারলেও তারা ভিন্ন ভাবনায় পুজো করে। পুজোর কটা দিন নিজেদের মতো করে আনন্দে পুজো কাটায় সকলকে সাথে নিয়ে। আর পঞ্চমীর দিন দুপুরে এই পুজোর শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানাঘাট লোকসভার সাংসদ জগন্নাথ সরকার, এছাড়াও এদিনের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবদ্বীপ ব্লকের স্বরূপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতর উপ প্রধান কানাই দাস, ছিলেন মধুসূদন সেন, সহ বহু বিশিষ্ট ব্যাক্তি।
বর্তমান সময়ে দাড়িয়েও ভারতবর্ষের পুরনো তথা পৌরানিক ঘটনা অবলম্বনে এই নবদুর্গা পুজোর আয়োজন করায় পুজো উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান সাংসদ জগন্নাথ সরকার, পাশাপাশি তিনি আরও বলেন মা দুর্গার কাছে আমার একটাই চাওয়া বর্তমানে তিলোত্তমার ঘটনা যেনো আর না ঘটে। দেবী দুর্গা যেন বিনাশ করে অসুর রূপী এই সমাজে থাকা সব সমাজ বিরোধীদের।