ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নেপালে ফের রাজতন্ত্র ও হিন্দু রাষ্ট্র পুনর্বহালের দাবিতে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে (Nepal protests for hindu monarchy)। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এই গণবিক্ষোভ দমন করতে সেনা মোতায়েন করেছে নেপাল সরকার, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে নেপালবাসী (Nepal protests for hindu monarchy)
২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নেপালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা হয় এবং ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান অনুমোদিত হয়, যেখানে দেশটিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় (Nepal protests for hindu monarchy)। তবে সম্প্রতি জনগণের এক বিশাল অংশ রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দাবি উত্থানের মূল কারণ সরকারের অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা।
রাজতন্ত্রের দাবি উত্থানের কারণ (Nepal protests for hindu monarchy)
নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার (Nepal protests for hindu monarchy) দাবির পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
1. স্থায়ী সরকারের অভাব: গত ১৬ বছরে নেপালে ১৩টি সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো সরকারই স্থায়ী হতে পারেনি। এই অস্থিরতা প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছে।
2. গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ: বারবার সরকার পরিবর্তন হওয়ায় জনগণের মনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
3. দুর্নীতি বৃদ্ধি: রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকেই দুর্নীতি বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ মানুষ।
4. অর্থনৈতিক সংকট: নেপালের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ৪ কোটি ১৮ লক্ষ ডলারের ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে নেপাল। মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
5. ধর্মীয় পরিচয়: ২০০৮ সালে গণতন্ত্র আসার আগে নেপাল ছিল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র। বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা করে অনেকেই হিন্দু রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: Nepal Protests: নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি জোরালো, বাড়ছে ক্ষোভ!
জ্ঞানেন্দ্র শাহ ও রাজতন্ত্রপন্থীদের উত্থান (Nepal protests for hindu monarchy)
নেপালের শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ (King Gyanendra Bir Bikram Shah) ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন (Nepal protests for hindu monarchy)। এরপর তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো কাঠমান্ডুর ‘নির্মল নিবাস’-এ বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, জনগণের একটি বড় অংশ তাঁকে সমর্থন জানাতে শুরু করেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক ভিডিওবার্তায় জ্ঞানেন্দ্র রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জনগণের সমর্থন চান। এরপর থেকেই বিক্ষোভ ব্যাপক আকার নেয়। ২৮ মার্চ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দহাল ওরফে প্রচণ্ড রাজতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দেন এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, রাজা যদি ফের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন, তবে তাঁকে চরম মূল্য দিতে হবে। এর পরদিনই বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নেয়।

আরও পড়ুন: India Us Diplomacy: ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের স্বর্ণযুগের আভাস ট্রাম্পের! কী কী নতুন পরিকল্পনা?
রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও সহিংস পরিস্থিতি (Nepal protests for hindu monarchy)
২৯ মার্চ কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয় (Nepal protests for hindu monarchy)। পুলিশের গুলিতে দু’জন রাজতন্ত্রপন্থী নিহত হন। এরপর থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ আকার নেয়। বিভিন্ন সরকারি দফতর ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়, দোকানপাট লুট হয় এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার সেনা মোতায়েন করলেও, রাজতন্ত্রপন্থীদের উত্থান রোধ করা সম্ভব হয়নি।
গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা? (Nepal protests for hindu monarchy)
কাঠমান্ডু পোস্ট-এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে (Nepal protests for hindu monarchy)। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশেরও বেশি নেপালবাসী রাজতন্ত্র পুনর্বহালের পক্ষে। অন্যদিকে, বর্তমান সরকার এবং মাওবাদী গোষ্ঠীগুলি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।