ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১৬ই জানুয়ারি, ১৯৪১ সাল! মধ্যরাত! কলকাতার এক বাঙালিবাবু ছদ্মবেশে পরিণত হলেন একজন ইনস্যুরেন্স এজেন্টে (Netaji Meeting Hitler)। নাম-মহাম্মদ জিয়াউদ্দিন! তিনি কলকাতা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে প্রথমে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, তারপর গোমো জাংশন থেকে ১৭ জানুয়ারি ধরলেন কালকা মেইল। কলকা মেইলে তিনি পৌঁছালেন পাঞ্জাবের পেশোয়ার। সেখান থেকে কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও পাহাড়ি ট্রাকে পৌঁছালেন আফগানিস্তানের কাবুল শহরে। সেখানে কখনও রাশিয়া, কখনও ইতালি, আবার কখনও জার্মান দূতাবাসে যোগাযোগ করলেন। অবশেষে ‘অরল্যান্দো মাৎতোত্তা’ নামে এক ব্যক্তির জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি প্রথমে রাশিয়া, তারপর সেখান থেকে জার্মানি পৌঁছান। এর কয়েকদিন পর ইথারে ছড়িয়ে পড়ে এক উদ্বিপ্ত কণ্ঠস্বর! ‘’দিস ইজ সুভাষ চন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজাদ হিন্দ রেডিও…।‘’
নেতাজীর দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা কীভাবে এল? (Netaji Meeting Hitler)
কলকাতার একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নেতাজী (Netaji Meeting Hitler)। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। গ্রেফতারির পর জেলে ব্যাপক অত্যাচার চালায় ব্রিটিশ জেলার। তাদের দাবি ছিল, নেতাজী যেন আন্দোলনের পথ ছেড়ে দেন। কিন্তু, নেতাজী তা করলেন না। বরং তিনি আমরণ অনশন শুরু করলেন। সঙ্গে তিনি দাবি জানালেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ প্রশাসন জেল থেকে মুক্তি দেয় নেতাজিকে। নয়তো নেতাজীর কিছু হলে গোটা দেশ আন্দোলনে ফেটে পড়বে। নেতাজী জেল থেকে মুক্তি পেলেও গৃহবন্দি করে রাখে ব্রিটিশ পুলিশ। তখন তিনি বুঝেছিলেন দেশে থেকে স্বাধীনতা আদায় করা যাবে না। সাহায্য প্রয়োজন বিদেশি শক্তি গুলির।
কাদের সাহায্য পেয়ে ছিলেন তিনি? (Netaji Meeting Hitler)
নেতাজী গৃহ বন্দি অবস্থায় দেশ ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছিলেন (Netaji Meeting Hitler)। তখন নেতাজিকে সাহায্য করেছিলেন পাঞ্জাবের একটি কমিউনিস্ট পার্টি। সেখান থেকেই নেতাজী জানতে পেরে ছিলেন পাঞ্জাব থেকে কাবুলের পথ দিয়ে রাশিয়া পেরিয়ে পৌঁছানো যাবে বার্লিন। কলকাতা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ধানবাদ পৌঁছতে নেতাজিকে সাহায্য করেছিলেন ভাইপো শিশির বোস। শিশির তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিলেন গোমো জংশনে। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন, আশোক বোস ও তার স্ত্রী। পাঞ্জাবে পৌঁছালে নেতাজিকে সাহায্য করেছিলেন কমরেড ভক্তরাম।
আরও পড়ুন: Scramjet Engine Ground Test: ভারতের হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে অগ্রগতি! সাফল্যের পথ দেখাচ্ছে ডিআরডিও

পাঞ্জাব থেকে কাবুল
পাঞ্জাব থেকে কাবুলের পথে নেতাজীর (Netaji Meeting Hitler) যাত্রা সঙ্গী ছিলেন ভক্তরাম, আবাদ খাঁ। কাবুলে পৌঁছে নেতাজিকে আত্মগোপন করে থাকতে সাহায্য করেছিলেন কাবুলের বাঙালি ব্যবসায়ীরা। কাবুলে প্রায় এক মাসের বেশি সময় আত্মগোপন করে ছিলেন নেতাজী। এরপর রাশিয়ার থেকে সাহায্য চাইলেও পেলেন না। জার্মান দূতাবাসে যোগাযোগ করে জার্মান বিদেশ সচিবের মাধ্যমে জার্মান বিদেশ মন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন। তাঁদের পরামর্শে ইতালীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে রাশিয়া পেরিয়ে জার্মানি পৌঁছে ছিলেন নেতাজী।
আরও পড়ুন: INS Kirch: নৌবাহিনীর গর্ব আইএনএস কির্চ-এর ২৪তম বর্ষপূর্তি উদযাপন
নেতাজীর সঙ্গে দেখা করতে চাননি হিটলার
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতাজী জার্মানিতে থেকেও হিটলারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। শোনা যায় হিটলার নাকি নেতাজীর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। এর পেছনে ছিল দুটি কারণ। একটি আদর্শগত আর একটি ছিল কূটনৈতিক। প্রথমত, হিটলার একজন জার্মান হয়েও ভারতের উপর ইংল্যান্ডের প্রভাবকে প্রশংসা করতেন। তিনি ভারতকে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ হিসেবেই দেখতে পছন্দ করতেন।
এমনকি হিটলার তার নিজের লেখা বই ‘মেইন ক্যাম্প’- এ ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘এশিয়াটিক জ্যাগুয়ার’ বলেও উপহাস করেছেন। আর দ্বিতীয় কারণটি ছিল কূটনৈতিক লাভের অভাব। কেননা তখন মধ্য গগনে চলছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে অনেক শক্তি ক্ষয় হয়েছে জার্মানির। সেই পরিস্থিতিতে ভারতকে সাহায্য করা মানে জার্মানির কাছে একটা বাড়তি সমস্যা। সেই কারণে হিটলার চাইছিলেন না নেতাজীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে।