ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার ছেলের বিয়ে বিলম্বিত করাকে (Netanyahu statement stun Israel) ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের “ব্যক্তিগত মূল্য” হিসাবে উল্লেখ করার পর তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক ইজরায়েলি এই মন্তব্যকে ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রিক বলে অভিহিত করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ‘ব্লিটজ’ তুলনা, মুখ থুবড়ে পড়ল নেতানিয়াহুর সহানুভূতির চেষ্টা (Netanyahu statement stun Israel)
ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর পুত্র আভনেরের বিয়ে পিছিয়ে যাওয়াকে ‘ব্যক্তিগত ক্ষতি’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন (Netanyahu statement stun Israel)। কিন্তু এই মন্তব্য ঘিরে ইজরায়েলের জনগণের একাংশ ও বিরোধী রাজনীতিকরা তাঁকে প্রচণ্ডভাবে সমালোচনা করছেন। অনেকেই এই মন্তব্যকে আত্মকেন্দ্রিক এবং বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
‘আমরাও ব্লিটজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি’ — বললেন নেতানিয়াহু (Netanyahu statement stun Israel)
বিয়ের শেভায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সোরোকা হাসপাতালের (Netanyahu statement stun Israel) সামনে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “এটা আমাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের ব্লিটজের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরাও এখন এক ব্লিটজ পার করছি।” তিনি জানান, তাঁর ছেলে আভনেরের বিয়ে ইতিমধ্যেই দু’বার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার কারণে। বিয়ে পিছোনোর ফলে ছেলের বাগদত্তা এবং স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু খুব কষ্ট পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সারাকে তিনি ‘একজন বীর’ বলেও আখ্যা দেন।
‘আমার পরিবারেরও ক্ষতি হয়েছে’ — নেতানিয়াহু (Netanyahu statement stun Israel)
নেতানিয়াহু বলেন, “অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, অনেক পরিবার আপনজনকে হারিয়েছেন — আমি তা বুঝি। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে, আর আমার পরিবারও তার ব্যতিক্রম নয়।” তাঁর এই মন্তব্য যে সোরোকা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়, সেই হাসপাতালেই আগের দিন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তাই এই ‘ব্যক্তিগত ত্যাগ’-এর ব্যাখ্যা শুনে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : চিন থেকে ইরানের দিকে পাঁচটি বোয়িং ৭৪৭ উড়ান, ইরানকে রসদ জোগাচ্ছে ড্রাগন?
বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের প্রবল ক্ষোভ
নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘যুদ্ধকালীন বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। ইজরায়েলের জনগণ যখন বোমার শব্দে দিন কাটাচ্ছেন, তখন এক নেতার পরিবারিক বিয়ে নিয়ে এমন আবেগঘন বক্তব্যকে অনেকেই কটাক্ষ করেছেন।ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, চলমান সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ২৪ জন ইজরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে মার্কিন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ইজরায়েলের আকস্মিক আকাশ হামলায় ইরানে অন্তত ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
ছেলের বিয়েতে ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনাতেও বিতর্ক
এই মন্তব্যের পরে আরও সমালোচনা ছড়ায়, যখন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ছেলের বিয়েতে ছুটি নেওয়ার কথা ভাবছেন। ওই বিয়ে সোমবার হওয়ার কথা ছিল। মূলত বিয়েটা নভেম্বর মাসে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা বাতিল করা হয়েছিল।
গাজায় ছেলেকে হারানো মায়ের প্রতিক্রিয়া
গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস আক্রমণের পর থেকে যাঁর ছেলে গাজায় বন্দি, সেই আনাত অ্যাংগ্রেস্ট এক্সে লেখেন, “আমি গত ৬২২ দিন ধরে গাজার নরককুণ্ডে রয়েছি।” তাঁর এই মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: California Unrest : ন্যাশনাল গার্ড নামিয়ে ভুল করেননি ট্রাম্প, জানাল মার্কিন ফেডেরাল আপিল আদালতের
‘নেতানিয়াহু এক সীমাহীন স্বার্থপর’ — বিরোধী সাংসদ
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেসেট সদস্য গিলাদ কারিভ বলেন, “আমি এমন বহু পরিবারকে চিনি যাদের বিয়ে স্থগিত করতে হয়নি, কারণ সেই বিয়ে আর কোনওদিন হবে না। কারণ, সেই সন্তানরা আর ফিরে আসবে না।” তিনি সারা নেতানিয়াহুকে ‘বীর’ বলার প্রসঙ্গেও কটাক্ষ করে বলেন, “যাঁরা রাতের ডিউটিতে বাড়ি ছেড়ে বেরোন, সেই সব চিকিৎসকরা হলেন প্রকৃত বীর। যাঁরা অনলাইনে পড়িয়ে বাচ্চাদের একসাথে রাখছেন, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকারাই হলেন নায়ক।”
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া
সাংবাদিক আমির টিবোনও সমালোচনায় সরব হন। তিনি বলেন, “নেতানিয়াহুকে নিয়ে আর কোনও বিস্ময়ের কিছু নেই। যখন সবচেয়ে বেশি একজন নেতার ব্যক্তিগত উদাহরণ দেখানো উচিত, তখনও তিনি নিজের ছবিটাকেই বেশি গুরুত্ব দেন।”