ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নতুন পাঠ্যবই প্রকাশ মস্কোতে (New Textbook in Russia)। রাশিয়ার নতুন এক পাঠ্যবই ইউক্রেন যুদ্ধকে নাৎসিদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছে এবং বলেছে যে রাশিয়া “বাধ্য” হয়ে ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়েছিল। সোমবার মস্কোতে এই বই প্রকাশ করা হয়েছে।
যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি (New Textbook in Russia)
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধকে (New Textbook in Russia), যা রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে “বিশেষ সামরিক অভিযান” বলে অভিহিত করে, একটি কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় লড়াই হিসাবে দেখেন। তিনি বলেন, এটি মূলত পশ্চিমি দেশ ও ন্যাটো-সমর্থিত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে একটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
পুতিনের মতে, পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়াকে দুর্বল ও বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। তাই এই যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ইউক্রেন ও পশ্চিমিদের প্রতিক্রিয়া (New Textbook in Russia)
অন্যদিকে, ইউক্রেন ও তার পশ্চিমি মিত্ররা বলছে, রাশিয়া আসলে একটি নিষ্ঠুর ও অযৌক্তিক যুদ্ধ চালাচ্ছে, যার মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করা (New Textbook in Russia)।
নতুন পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু (New Textbook in Russia)
“রাশিয়ার সামরিক ইতিহাস” নামে তিন খণ্ডের এই পাঠ্যবইটি সম্পাদনা করেছেন ভ্লাদিমির মেদিনস্কি (New Textbook in Russia)। তিনি পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ সহকারী এবং ২০২২ সালে যুদ্ধের প্রথম দিকে ইউক্রেনের সঙ্গে ব্যর্থ শান্তি আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: Iran buys Su-35: রাশিয়ার কাছ থেকে সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনল ইরান, বাড়ছে তেহরানের সামরিক শক্তি
এর আগে, মেদিনস্কি রাশিয়ার প্রধান ইতিহাস পাঠ্যবইও সহ-লেখক হিসেবে তৈরি করেছিলেন। নতুন পাঠ্যবইয়ের তৃতীয় খণ্ডটি ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
যুদ্ধের ব্যাখ্যা ও যুদ্ধের কৌশল
এই বইয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেন ক্রেমলিন মনে করে যে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং কীভাবে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সেনাদের “বীরত্বপূর্ণ” কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও, বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে আধুনিক রুশ সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সোভিয়েত সামরিক কৌশল কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে।
যুদ্ধের কারণ নিয়ে পাঠ্যবইয়ের ব্যাখ্যা
“পেশাদারিত্ব, অপরাজেয়তা ও সাহস: বিশেষ সামরিক অভিযানে রুশ সেনারা” শিরোনামের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, রাশিয়া বাধ্য হয়েই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়েছিল।
বইটিতে বলা হয়েছে, বহু বছর ধরে পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ উপেক্ষা করেছে। বিশেষ করে ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং ২০১৪ সালে পশ্চিম-সমর্থিত আন্দোলনের মাধ্যমে রাশিয়া-ঘনিষ্ঠ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া রাশিয়াকে দুর্বল করে দেয়।
বইটিতে দাবি করা হয়েছে, এর ফলে ইউক্রেন একটি “আক্রমণাত্মক, রাশিয়াবিরোধী ঘাঁটিতে” পরিণত হয়।
ন্যাটো ও ইউক্রেনের অবস্থান
তবে ন্যাটো এবং ইউক্রেন এই দাবিকে অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, তারা কখনোই রাশিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেনি।
পাঠ্যবই নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞের মতামত
নতুন পাঠ্যবই নিয়ে মস্কোতে রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা TASS-এর এক সাংবাদিক সম্মেলনে সামরিক ইতিহাসবিদ ইভান বাসিক বলেন, ইউক্রেন ও পশ্চিমিদের কর্মকাণ্ডের কারণেই এই যুদ্ধ “অবশ্যম্ভাবী” হয়ে উঠেছিল।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল নতুন প্রজন্মকে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের, বোঝানো যে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান বাধ্য হয়েই চালানো হয়েছে।”
ইউক্রেন ও পশ্চিমামিদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন এই নতুন পাঠ্যবইকে সম্পূর্ণভাবে “প্রচারমূলক” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করবে। পশ্চিমি দেশগুলিও একে রাশিয়ার তরুণদের মধ্যে “যুদ্ধের সমর্থন তৈরি করার প্রচেষ্টা” বলে বিবেচনা করবে।
পাঠ্যবই দিয়ে কী বোঝাতে চাইছে রাশিয়া?
এই নতুন পাঠ্যবই রাশিয়ার তরুণদের শেখানোর জন্য তৈরি হয়েছে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমি দেশগুলি ষড়যন্ত্র করছে এবং রাশিয়ার বর্তমান যুদ্ধ আসলে তার আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে ক্রেমলিন নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে, যাতে জনগণের মধ্যে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন বজায় থাকে।
ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী হতে পারে?
এই পাঠ্যবই রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতের রুশ প্রজন্ম যুদ্ধকে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলি এবং ইউক্রেন এই প্রচেষ্টাকে যুদ্ধের “ভুল ইতিহাস শেখানোর কৌশল” হিসেবে দেখছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাঠ্যবই রাশিয়া ও পশ্চিমিদের মধ্যে চলমান মতাদর্শগত সংঘর্ষকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।