ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দক্ষিণ ভারতের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থল হিসেবে পরিচিত কর্ণাটকের ধর্মস্থলা মন্দির এখন চাঞ্চল্যের কেন্দ্রে(Dharmasthala)। এক প্রাক্তন সাফাইকর্মীর বিস্ফোরক অভিযোগে উন্মোচিত হচ্ছে সম্ভাব্য এক ভয়ঙ্কর গণহত্যার ছায়াচিত্র।ইতিমধ্যে ধর্মস্থলে গণকবর মামলায় দেহ উদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।ধর্মস্থলে দুই দশক ধরে গণহত্যা, যৌন নিপীড়ন এবং গোপনে কবর দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে রাজ্য সরকার। অবশেষে বহু খনন এবং তদন্ত চালানোর পর ষষ্ঠ সমাধিস্থল থেকে আংশিক মানব কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।
কিশোরীদের যৌন নির্যাতনের পর খুন (Dharmasthala)
১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে একের পর এক ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটেছিল কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার ধর্মস্থলায়(Dharmasthala)। নাবালিকা, স্কুলছাত্রী, তরুণী, কিশোরীদের অপহরণ করে যৌন নির্যাতনের পর খুন করা হত। তারপর দেহগুলি মাটি চাপা বা আগুনে পুড়িয়ে গায়েব করে দেওয়া হত। নিখোঁজ কন্যাদের পরিবারের কেউ কেউ থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও কিনারা করতে পারেনি। সম্প্রতি এইসব ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন সেখানকার এক সাফাই কর্মীর। ৪৮ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি ১২ বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ৩ জুলাই কর্ণাটক পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

দেহাবশেষগুলিকে পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ (Dharmasthala)
যিনি ওই অভিযোগ করেন এবং যে ব্যক্তি সেখানে দেহগুলি পুঁতেছিলেন বলে অভিযোগ, তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই সোমবার থেকে ওই এলাকা পরিদর্শন করার কাজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা (Dharmasthala)। সেখানকার ভূমি দফতরের আধিকারিক, স্থানীয় পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে, বিশেষ তদন্তকারী দল অভিযোগকারীকে নিয়ে ধর্মস্থলের প্রবেশপথে নেত্রাবতী নদীর স্নানঘাট-সহ একাধিক স্থান পরিদর্শন করে। কিন্তু এতদিন কোনও দেহাংশ বা কঙ্কাল পাওয়া যায়নি। কিন্তু নতুন প্রমাণ হাতে আসতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফরেনসিক দল দেহাবশেষগুলি পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেছে। তদন্তে আরও সহায়তার জন্য কুকুর বাহিনী আনা হয়েছে। সময়ের ব্যবধান এবং আবহাওয়ার প্রভাবের কারণে দেহাবশেষ এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে পারে, সেই আশঙ্কায় খনন কাজ সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-Stock market: ট্রাম্পের বোমায় রক্তাক্ত দালাল স্ট্রিট! লক্ষ্মীবারে ভোগ্যপণ্যের শেয়ারে লক্ষ্মীলাভ
সিটের তদন্তে সাফল্য (Dharmasthala)
অবশেষে মঙ্গলবার অভিযুক্তের দেখানো জায়গায় প্রায় ৮ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি মাটি খোঁড়া হয়(Dharmasthala)। অবশেষে মেলে সাফল্য সিটের তদন্তে। সেখান থেকে মানব কঙ্কালের হদিশ পায় সিট। এর আগে, নিখোঁজ মেডিকেল ছাত্রী অনন্যা ভাটের মা সুজাতা ভাটের আইনজীবী এন মঞ্জুনাথ জানান, সিটের তদন্তে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে একটি প্যান কার্ড এবং দুটি এটিএম কার্ড রয়েছে, যার একটিতে পুরুষের নাম এবং অন্যটিতে ‘লক্ষ্মী’ নাম লেখা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছেন, যেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কবর রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই স্থানে পরবর্তী পর্যায়ে খনন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন-Jewelry Exporters: ১ লক্ষেরও বেশি চাকরি ঝুঁকিতে! ট্রাম্পের শুল্ক বোমায় উদ্বিগ্ন বণিক মহল
মন্দির কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন (Dharmasthala)
ধর্মস্থলাকে ঘিরে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ নতুন নয়(Dharmasthala)। ১৯৮৭ সালে পদ্মলতা নামক এক কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যা ঘিরে আন্দোলন হয়, যার বিচার আজও অসম্পূর্ণ। ২০১২ সালে ১৭ বছরের সৌজন্যাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়, যার তদন্ত আজও বিতর্কিত। সেই সময়েও মন্দির কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।২০ জুলাই মন্দির কতৃপক্ষ এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। সমাজের নৈতিক ভিত্তি সত্য ও বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে। সিট-এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশ হোক, এটাই আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা।’ অন্যদিকে, এই ভয়াবহ অভিযোগে যখন দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তখন কর্ণাটকের এই পবিত্র তীর্থস্থান ঘিরে গণধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গায়েবের অভিযোগ ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়কে উন্মোচনের দিকে এগোচ্ছে।
