ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বড় সাফল্য পেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (IS)-এর হয়ে ভারতে কাজ করা একটি সক্রিয় স্লিপার সেলের দুই পলাতক সদস্যকে গ্রেফতার করল তারা মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে (NIA Arrest)। ধৃতদের নাম আবদুল্লা ফৈজ শেখ ওরফে ডায়পারওয়ালা এবং তালহা খান।
দীর্ঘ দিন ফেরার, এনআইএ-র নজরে ছিল দু’জনেই (NIA Arrest)
দুই অভিযুক্ত ২০২৩ সালের পুনে বিস্ফোরক প্রস্তুতি মামলার অন্যতম মূলচরিত্র (NIA Arrest)। সূত্রের খবর, জাকার্তায় আত্মগোপন করে ছিল তারা। শুক্রবার রাতে তারা ভারতের মাটিতে পা রাখতেই এনআইএ (NIA India)-র ওত পেতে থাকা দল মুম্বই বিমানবন্দরেই তাদের গ্রেফতার করে। এই দুই ব্যক্তির খোঁজ দিতে পারলে ৩ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তাছাড়া, মুম্বইয়ের এনআইএ আদালত জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
কী ছিল ‘পুনে আইইডি ষড়যন্ত্র’?(NIA Arrest)
২০২২-২৩ সালের মধ্যে পুনে শহরে একটি সন্ত্রাসবাদী চক্র গোপনে বিস্ফোরক তৈরির কাজ শুরু করে(NIA Arrest)। এনআইএ-র তদন্তে জানা যায়, আবদুল্লা ও তালহার নেতৃত্বে আইএস-এর একটি স্লিপার সেল আইইডি তৈরি করে এবং তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। এরপর তারা সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থল ও বিস্ফোরণের কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত হয়। এর পাশাপাশি তারা অন্যান্য তরুণ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিত, যাতে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া যায়।

প্রথম থেকেই চিহ্নিত লক্ষ্য ছিল ভারতের অখণ্ডতা(NIA Arrest)
এনআইএ জানিয়েছে, স্লিপার সেলটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের শান্তি, সংবিধান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করা। এই চক্রটি ভারতের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা এবং গণপরিসরে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ছক কষছিল। তালহারা শুধুমাত্র বিস্ফোরক প্রস্তুতি নয়, আইএস-এর আদর্শ প্রচার এবং সদস্য সংগ্রহেও জড়িত ছিল।
কী ভাবে ধরা পড়ল তারা?(NIA Arrest)
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকার্তা শহরে গত দু’বছর আত্মগোপনে ছিল এই দুই জঙ্গি। সেখান থেকেই তারা আইএসের নির্দেশে ভারতে ফেরার পরিকল্পনা করছিল। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এনআইএ জানতে পারে যে, আবদুল্লা ও তালহা একটি নির্দিষ্ট ফ্লাইটে ভারত ফিরছে। তাদের বিমান মুম্বইয়ে নামতেই তাদের বিরুদ্ধে থাকা লুকআউট নোটিস (LoC)-এর ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে তাদের চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা হয়।

আইএস-এর ভারতে নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত?(NIA Arrest)
ভারতে আইএস-এর সরাসরি কার্যকলাপ সীমিত হলেও স্লিপার সেলের মাধ্যমে গোপন যোগাযোগ এবং সন্ত্রাসমূলক প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরে চালানো হয়েছে। ২০২০-এর পর থেকে এনআইএ ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা দক্ষিণ ভারত, মহারাষ্ট্র ও জম্মু-কাশ্মীর থেকে বেশ কয়েকটি আইএস সমর্থক গ্রুপকে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে অনেকেই টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, থ্রেমা-র মতো এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে যোগাযোগ রাখত।
আটকের পরবর্তী ধাপ কী?(NIA Arrest)
আবদুল্লা ও তালহাকে আপাতত এনআইএ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডিভাইস, বিদেশি মুদ্রা ও বেশ কিছু গোপন নথিপত্র। তদন্তকারীদের বিশ্বাস, এই জেরা থেকে আইএস-এর দক্ষিণ এশিয়া চক্রের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।
পুলিশ ও নিরাপত্তা(NIA Arrest)
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অজয় সাহানি জানান, “এই গ্রেফতার শুধু আইনি সাফল্য নয়, এটি স্পষ্ট করে যে ভারত এখন আইএস বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেলকে আর অবহেলা করছে না। দ্রুত পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা নজরদারি—এই সব মিলিয়েই এই সফলতা।” এই গ্রেফতারি দেখিয়ে দিল, ভারত তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় কতটা প্রস্তুত। এনআইএ-র দ্রুত পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা—ভারতে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কোনও চেষ্টাই আর ধরা না পড়ে যাবে না।