ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে জিএসএলভি-মার্ক II রকেটে চেপে উৎক্ষেপণ করা হল নিসার উপগ্রহ (Nisar Satellite Launch)। এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) এবং মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিশ্বের প্রথম দ্বি-ব্যান্ড রাডার উপগ্রহ। নিসার-এর মাধ্যমে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনগুলোও নজরে রাখা যাবে, আর তার তথ্য পাওয়া যাবে প্রায় তাৎক্ষণিক ও উন্মুক্ত উৎস হিসেবে—যা সাধারণ বিজ্ঞানী, কৃষক, প্রশাসক ও দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থাগুলির জন্য হবে এক বড় সম্পদ।
বিকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করা হয়। উৎক্ষেপণের ১৮ মিনিট পর উপগ্রহটি সফলভাবে মহাকাশে নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছে যায়। তবে নিসার এখনও পূর্ণ বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম শুরু করবে না। এর আগে চলবে ৯০ দিনের ‘ইন-অরবিট চেকআউট’ (IOC) পর্যায়, যেখানে উপগ্রহের সমস্ত যন্ত্রাংশ পরীক্ষা ও ক্যালিব্রেশন করা হবে।
কী আছে নিসার-এ? (Nisar Satellite Launch)
নিসার উপগ্রহে রয়েছে L-Band ও S-Band Synthetic Aperture Radar (SAR)।
- L-Band মাটি, তুষার, গাছপালা ইত্যাদির ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, যা জলাধার, বনভূমি ও ভূমি-চ্যুতি পর্যবেক্ষণে সহায়ক।
- S-Band তুলনামূলকভাবে উচ্চ রেজোলিউশনে নগর অবকাঠামো, বন্যা এলাকা ও গাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
উপগ্রহের বিশাল সোনালী অ্যান্টেনা পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত সংকেত সংগ্রহে সক্ষম, যা নিখুঁত মানচিত্র প্রস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে(Nisar Satellite Launch)। এই প্রযুক্তি পৃথিবীর স্থলভাগ ও বরফে আবৃত অঞ্চল প্রতি ১২ দিনে একবার সম্পূর্ণভাবে স্ক্যান করবে।
ভারতীয় কৃষির জন্য আশীর্বাদ (Nisar Satellite Launch)
নিসার থেকে পাওয়া তথ্যের সবচেয়ে বড় ব্যবহার হবে কৃষি ক্ষেত্রে(Nisar Satellite Launch)। এটি,
- শস্যের বৃদ্ধি ট্র্যাক করবে,
- উদ্ভিদের স্বাস্থ্য বুঝতে সাহায্য করবে,
- এবং মাটির আর্দ্রতার মাত্রা নিরীক্ষণ করবে।
এই ডেটার মাধ্যমে কৃষকরা আরও বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে অভ্যস্ত হতে পারবেন এবং দুর্যোগের সময় আগাম সতর্কতাও পেতে পারেন।

আরও পড়ুন: Tsunami in US : সুনামির ছোবল আমেরিকার উপকূলে! হাওয়াই থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত সতর্কতা
জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব (Nisar Satellite Launch)
নিসার মিলিমিটার মাত্রার পরিবর্তন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে, যা ভূমিকম্প, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস দিতেও কাজে আসবে।
এছাড়া, গ্রীনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকার বরফপাত, সমুদ্রের বরফ সঞ্চার, জলাভূমির বিস্তার পর্যবেক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ হবে নিসার।
আরও পড়ুন: Operation Shivshakti : কাশ্মীরে ফের অভিযান, এবার ‘অপারেশন শিবশক্তি’! সেনার গুলিতে নিহত ২
কূটনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও তাৎপর্যপূর্ণ (Nisar Satellite Launch)
এক সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল(Nisar Satellite Launch)। সেই আমেরিকাই আজ ভারতের পাশে থেকে একটি বিশ্বমানের বিজ্ঞান প্রকল্পে অংশীদার হল। এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার আত্মবিশ্বাস এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্পষ্ট প্রমাণ।
নিসার শুধু একটি উপগ্রহ নয়, এটি বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার। বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, কৃষক, এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে এটি হয়ে উঠবে প্রকৃতির সঙ্গে সংলাপের একটি প্ল্যাটফর্ম। নিসার যেন মহাকাশ থেকে পৃথিবীর প্রতি এক নিরব পর্যবেক্ষক—যে শুধুই তথ্য দেবে না, ভবিষ্যতের জন্য দিশাও দেখাবে।