ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইন ভর্তির পোর্টালে ওবিসি কোটা নিয়ে আদালত অবমাননার মামলায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাইকোর্ট (OBC Certificate case)। আপাতত সমস্ত ক্যাটেগরি আবেদন করতে পারবে। আপাতত কোনও ক্যাটেগরি ধরে আবেদন গৃহীত হবে না। রাজ্যকে এ ব্যাপারে হলফনামা দিতে নির্দেশ বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের। পাশাপাশি, ২০১০ সালে যাঁরা ওবিসি তালিকায় নথিভুক্ত ছিলেন, তাঁদের অধিকারও যে ক্ষুণ্ণ হবে না, তা-ও হলফনামায় জানাতে হবে রাজ্যকে। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি।
মামলাকারীদের অভিযোগ (OBC Certificate case)
হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনেই রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির অনলাইন পোর্টালে এখনও ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি নিয়ে আলাদা ভাবে ভর্তির উল্লেখ করা রয়েছে (OBC Certificate case)। এই অভিযোগে আদালত কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার মূল আবেদনকারী। মামলাকারীদের অভিযোগ, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশ অবমাননা করে এই পোর্টাল চলছে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নতুন ওবিসি সংরক্ষণ তালিকার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করার পরও কী করে পোর্টালে ওবিসি দুই ক্যাটাগরি রয়েছে?
মেরিট লিস্ট প্রকাশের সময় বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা (OBC Certificate case)
আদালতের নির্দেশ মতো ২০১০ সালের আগে ওবিসি শংসাপত্রে কোনও শ্রেণিবিন্যাস ছিল না (OBC Certificate case)। গত ১৭ জুন ওবিসি নতুন তালিকা তৈরি নিয়ে রাজ্যের বিজ্ঞপ্তির উপর ইতিমধ্যে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায়ের দিনই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কলেজগুলিতে ভর্তির অনলাইন পোর্টালের সূচনা করেন। সেই পোর্টালে ‘ওবিসি (এ)’ এবং ‘ওবিসি (বি)’ ক্যাটেগরির উল্লেখ আছে। আর সেখানেই বিপত্তি।মামলাকারীদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশের ফলে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি তালিকার বৈধতা এখন নেই। ২০১০ সালের আগে যে ৬৬টি সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, সেটিই বৈধ। কারণ, কলকাতা হাইকোর্ট গত বছরই ২০১০ সালের পর রাজ্যে ইস্যু হওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে। তার পরেও আদালতের নির্দেশ না মেনে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। ৭০ হাজারের বেশি আবেদন ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে। এমনকি রাজ্য সরকারি পোর্টালে ওবিসি ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটেগরি অনুযায়ী আবেদন নেওয়া হয়েছে। ৬৬টি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়নি। আবেদনকারীদের যুক্তি, ক্যাটেগরির উল্লেখ থাকলে ভবিষ্যতে আসন সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হবে। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী ৫ জুলাই মেরিট লিস্ট প্রকাশের সময় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
অবমাননা মামলায় হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট
বৃহস্পতিবার বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এখনই এই বিষয়ে আপাতত হস্তক্ষেপ করতে রাজি হল না। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় এখনই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় হাইকোর্ট। তবে আদালত জানিয়ে দিল, ওবিসি জটে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া কোনভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না। তবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আবেদনপত্রে কোনও ‘ক্যাটেগরি’ উল্লেখ করা যাবে না। সব ক্যাটেগরিই এখন আবেদন করতে পারবে।
রাজ্যের আইনজীবীর দাবি
শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী আদালতে জানান, ৫৪টি অমুসলিম জনগোষ্ঠী এবং ১২টি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ২০১০ সালের আগে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ঘোষণা করা হয়।আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে যাদের ওবিসি-তে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তাদের শংসাপত্র বাতিল হয়েছে। এতে ওবিসি মামলার জন্য কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে সব নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে রয়েছে।
মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই এদিন প্রশ্ন তুলেছেন দুই বিচারপতিই। মামলাকারীদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘আপনারা কী করে এই অভিযোগ করছেন? কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ১২ জুন। এই আদালতে নির্দেশের পর শ্রেণীবিন্যাস স্থগিত রাখা হয়েছে। রাজ্য এখন মাঝামাঝি জায়গায় আটকে রয়েছে। রাজ্য এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের নির্দেশ খারিজ করে দেয় তখন কী হবে? তাই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে অসুবিধা কোথায়? তারা মেধা তালিকা তৈরি করেনি।
সকলকে ভর্তি নিতে পারবে বলে জানিয়েছে রাজ্য
হাইকোর্টের নির্দেশের পর সকলকে ভর্তি নিতে পারবে বলে রাজ্য জানিয়েছে। পরে শ্রেণীবিন্যাস করা হবে। যদি সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশে হস্তক্ষেপ না করে তখনই আপনারা এই অভিযোগ তুলতে পারবেন। শ্রেণীবিন্যাস করা না হলে আপনাদের অধিকার কীভাবে বঞ্চিত হবে? এখন শ্রেণীবিন্যাস বন্ধ রেখেছে রাজ্য। তারা পরে শ্রেণীবিন্যাস করলে আপনার অসুবিধা কোথায়! তখন যদি আপনার অধিকার বঞ্চিত হয়, তখন আদালতে আসবেন। আপাতত কোনও ক্যাটেগরি ধরে আবেদন গৃহীত হবে না। আবেদন প্রক্রিয়া যেমন চলছে চলুক। যদি সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে, তখন সেই অনুযায়ী দেখা হবে। পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। যারা আবেদন করছেন তাদের আবেদন করতে দিন। এখনই আমরা এই নিয়ে কোনও নির্দেশ দেব না।’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: কখন ঘুরবে রথের চাকা? দিঘায় প্রস্তুতি বৈঠকের পর জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
‘কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়নি’
এদিন আদালতে রাজ্য জানায়, কলকাতা হাইকোর্টের ১৭ জুনের নির্দেশের পর তারা কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কলেজে ভর্তি এবং সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে এখন শ্রেণীবিন্যাস করা হবে না।ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দায়ের করা হয়েছে। ২৪ জুন উচ্চশিক্ষা দফতরের পোর্টালে আপডেট আপলোড করা হয়েছে। এখনই ভর্তি হয়নি, ফলে কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়নি।
আরও পড়ুন : Mahesh Rath Yatra: ৬২৯ বছরের রথে রাজবেশে প্রভু, রশি টানার অপেক্ষায় মাহেশের ভক্তেরা
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত এই বিষয়ে আপাতত হস্তক্ষেপ করল না। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশে জানিয়ে দিলেন, আপাতত সমস্ত ক্যাটেগরি আবেদন করতে পারবে। তবে কোনও ক্যাটেগরি উল্লেখ করা যাবে না। রাজ্যকে অবমাননার অভিযোগে জবাবদিহি করতে এই বিষয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। ২০১০ সালে যাঁরা ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁদের অধিকারও যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা-ও হলফনামায় জানাতে হবে রাজ্যকে। আগামী ৪ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।