ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চালানো নিখুঁত ও গোপন হামলা নিয়ে দেশজুড়ে যেমন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই এক অস্ত্রকে ঘিরে বাড়ছে কৌতূহল ও চর্চা— সেটি হল আত্মঘাতী ড্রোন ‘স্কাই স্ট্রাইকার’(Operation Sindoor)। নিঃশব্দে শত্রু ঘাঁটিতে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংসের সাক্ষ্য রেখে যাওয়া এই ইজরায়েলি প্রযুক্তির ড্রোন বানানো হয়েছে ভারতের বেঙ্গালুরুতেই। ‘লয়টারিং মিউনিশন’-এর অন্তর্গত এই ড্রোন ভারতীয় সেনার গোপন অভিযানের অন্যতম নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
আত্মঘাতী ড্রোন নজরদারির নয়, ধ্বংসের (Operation Sindoor)
সাধারণত ড্রোন শব্দে আমরা যে চিত্র কল্পনা করি, সেটি পর্যবেক্ষণের বা নজরদারির(Operation Sindoor)। কিন্তু ‘স্কাই স্ট্রাইকার’ তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে। এটি কোনও তথ্য সংগ্রহকারী ড্রোন নয়— এটি আত্মঘাতী মারণ অস্ত্র। লক্ষ্যবস্তুর উপর চক্কর কেটে সঠিক সময়ে আঘাত হানে এবং নিজেকে বিস্ফোরিত করে দেয়। ফলে এটি কার্যত ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই কাজ করে। এই ড্রোন প্রায় ১০ কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম এবং ১০০ কিমি দূরের লক্ষ্য নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এটি প্রায় নিঃশব্দে উড়ে যেতে পারে, ফলে শত্রুর পক্ষে আগে থেকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন।
ইজরায়েলি প্রযুক্তি, ভারতীয় উৎপাদন(Operation Sindoor)
স্কাই স্ট্রাইকার তৈরি হয়েছে ইজরায়েলের Elbit Systems-এর ডিজাইনে, তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা Alpha Design Technologies এই ড্রোনের উৎপাদন করছে বেঙ্গালুরুর নিজস্ব ইউনিটে(Operation Sindoor)। ২০২১ সালে ভারত সরকার এই ড্রোনের ১০০টির বেশি ইউনিট কেনার চুক্তি করে। সেই সময় থেকেই সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে এই প্রযুক্তি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।সূত্র অনুযায়ী, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পরপরই এই ড্রোন কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কারণ সেনা চাইছিল এমন একটি অস্ত্র যা একাধারে গোপন এবং বিধ্বংসী।

পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভূমিকা(Operation Sindoor)
সেনার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় হামলা চালানো হয়(Operation Sindoor)। লক্ষ ছিল জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তইবার গোপন ঘাঁটি। স্ক্যাল্প ও হ্যামার ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ভারত (INDIAN ARMY) ব্যবহার করে স্কাই স্ট্রাইকার ড্রোন, যা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিঃশব্দে ঢুকে ধ্বংস করেছে জঙ্গিঘাঁটি। এই ধরনের ড্রোনের বিশেষত্ব হল, এগুলি একটানা ২ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে চক্কর কাটতে পারে। সঠিক সময় ও কোণে থাকা অবস্থায়, ড্রোন নিজেই নিজেকে টার্গেটের উপর ফেলে দেয়। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি সিঙ্গল-মিশন অস্ত্র, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত হলে এটি আর পুনরায় ব্যবহারযোগ্য নয়। তবে যে সুনির্দিষ্টতা ও সাফল্য এই ড্রোন এনে দেয়, তাতে তা অমূল্য।

আরও পড়ুন: Sudarshan Chakra : পাকিস্তানের রাডার ধ্বংস করা ‘সুদর্শন চক্র’ কীভাবে আঘাত হানে?
প্রতিপক্ষের রেডারে ধরা পড়ে না(Operation Sindoor)
এই ড্রোনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল— এটি শত্রুর রাডারেও সহজে ধরা পড়ে না(Operation Sindoor)। কারণ এর গতি কম, উচ্চতা নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং শব্দমাত্রা অত্যন্ত নিম্ন। ফলে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একে লক্ষ্য করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেও না।পাকিস্তান অবশ্য দাবি করেছে, তারা ভারতের ১২টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দাবি যথেষ্ট অংশে কৌশলগত বিভ্রান্তিমূলক। পাকিস্তান যে ড্রোনগুলি গুলি করে নামানোর কথা বলছে, সেগুলি মূলত ‘হারপ’ (Harop) নামের ইজরায়েলি ড্রোন, যেগুলিও আত্মঘাতী হলেও ভিন্ন ধাঁচের।

বিশেষজ্ঞদের মতামত(Operation Sindoor)
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অরুণ শর্মা বলেন,
“স্কাই স্ট্রাইকার একটি গেমচেঞ্জার অস্ত্র(Operation Sindoor)। বিশেষত ভারত-পাক সংঘর্ষে যেখানে শত্রু ঘাঁটি পাহাড়ি বা গোপন জায়গায় লুকোনো থাকে, সেখানে এমন নিখুঁত ও নিঃশব্দ অস্ত্র অত্যন্ত কার্যকর।”
তাঁর মতে, এই ড্রোন ভবিষ্যতের যুদ্ধে আরও বেশি ব্যবহৃত হবে, কারণ এটি চালাতে কোনও পাইলট লাগে না, প্রাণহানি নেই, এবং অভিযানের গোপনীয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে(Operation Sindoor)।‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার আরেকটি দৃষ্টান্ত। আর তার অন্যতম নায়ক স্কাই স্ট্রাইকার ড্রোন, যা নিঃশব্দে ঢুকে শত্রুর বুকে বজ্রাঘাত করে ফিরে এসেছে না, থেকে গেছে ধ্বংসস্বরূপ। এই আত্মঘাতী ড্রোন ভবিষ্যতের যুদ্ধপটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে— যেখানে প্রযুক্তি, কৌশল আর গোপনতা একে অপরের পরিপূরক।