ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পঞ্জাব প্রদেশে সুনির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (Rajnath Singh) জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনা “সামান্য ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে” সফলভাবে এই প্রত্যাঘাত সম্পন্ন করেছে(Operation Sindoor)। বৃহস্পতিবার একটি সামরিক আলোচনাসভায় তাঁর এই মন্তব্য নতুন করে জল্পনা তৈরি করেছে, কারণ এখনো পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার কিংবা সেনার তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানানো হয়নি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর মন্তব্য (Operation Sindoor)
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন,
“আমাদের পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এই অভিযান সম্পন্ন করেছে। নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হেনে ন’টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে তা সামান্য। সেনাবাহিনীর জন্য আমরা গর্বিত।”
তিনি আরও জানান, এই অভিযানে ‘শতাধিক সন্ত্রাসবাদী’ নিহত হয়েছেন বলে সেনা সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন যে, দেশের নিরাপত্তা ও গোপন কৌশলগত তথ্য প্রকাশ না করাটাই সঠিক পন্থা(Operation Sindoor)।
সরকারি ‘নীরবতা’র মাঝে পাক দাবি (Operation Sindoor)
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনা ও সরকার ভারতের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পাল্টা প্রচারে নেমেছে(Operation Sindoor)। পাক সেনা দাবি করেছে, ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি রাফাল, একটি সুখোই-৩০, একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন তারা গুলি করে নামিয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন,
“ভারতের ৮০টি যুদ্ধবিমান ছ’টি শহরে হামলার চেষ্টা করেছিল। আমরা রুখে দিয়েছি। পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছে, তার মধ্যে দু’টি রাফাল কাশ্মীরে এবং একটি ভাতিন্দায় ভেঙে পড়েছে।”
এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে পাকিস্তান কিছু ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত রাফাল’-এর ছবি প্রকাশ করলেও বিশ্লেষকরা সেগুলিকে ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর বলেই দাবি করেছেন।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া কৌশলগত ‘স্ট্র্যাটেজিক সাইলেন্স’?(Operation Sindoor)
যদিও পাকিস্তানের তরফে যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর মতো গুরুতর দাবি করা হয়েছে, ভারত এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে সরকারি ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি(Operation Sindoor)। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই নীরবতা “স্ট্র্যাটেজিক সাইলেন্স”, অর্থাৎ কৌশলগত চুপ থাকা। কারণ, একদিকে তা জল্পনা ছড়াতে দেয় না, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে দোষারোপ এড়ায়।

আরও পড়ুন: Sudarshan Chakra : পাকিস্তানের রাডার ধ্বংস করা ‘সুদর্শন চক্র’ কীভাবে আঘাত হানে?
যুদ্ধক্ষেত্রে ‘তথ্য-যুদ্ধ’ এখন নতুন অস্ত্র(Operation Sindoor)
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে কেবল মিসাইল বা ড্রোন নয়, তথ্য বা প্রোপাগান্ডা নিজেই এক অস্ত্র হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান যেমন তাদের দিক থেকে ‘বিজয়ের প্রচার’ চালাচ্ছে, তেমনই ভারতও কৌশলগত ভাবে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চায়— এই অপারেশন পরিকল্পিত, লক্ষভেদকারী এবং সফল।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের মত(Operation Sindoor)
প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্মকর্তা এয়ার মার্শাল বিপিন যোশী (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন,
“রাজনাথ সিংহের বক্তব্য সঠিক কৌশলের ইঙ্গিত। সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হলে তা লুকানো উচিত নয়, কিন্তু পুরো তথ্য প্রকাশ করাও ঠিক নয়। পাকিস্তানের দাবি অনেকটাই প্রোপাগান্ডা-নির্ভর।”
গণমাধ্যম ও জনমতের চাপে সরকার?(Operation Sindoor)
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পাকিস্তানের দিক থেকে ধারাবাহিক ভাবে ভারতীয় ক্ষয়ক্ষতির দাবি এবং কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সেই তথ্যের পুনঃপ্রচার ভারতের উপর চাপ বাড়াতে পারে— সরকার হয়তো বিবৃতিতে আরও স্পষ্টতা আনবে(Operation Sindoor)। তবে ভারতের অভ্যন্তরে জনমত অনেকটাই সেনার পাশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেনার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য নিয়ে প্রশংসার ঝড় বইছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ‘সামান্য ক্ষয়ক্ষতি’র স্বীকারোক্তি যতই কৌশলগত হোক, তা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার লড়াই যেমন অস্ত্রের যুদ্ধের সঙ্গেই চলে, তেমনই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশন সিঁদুর হয়তো সম্পূর্ণ কাহিনি নয়, এটি এক বৃহত্তর লড়াইয়ের সূচনা মাত্র।