ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে পাকিস্তানের মাটিতে চালানো সফল প্রত্যাঘাত নিয়ে যখন গোটা দেশ চমকে উঠেছে, ঠিক তখনই আরেক নজির গড়ল ভারতীয় সেনা — প্রত্যাঘাতের বিষয় ব্যাখ্যার দায়িত্ব দেওয়া হল দুই শীর্ষস্থানীয় মহিলা অফিসারকে (Operation Sindoor)। সেনার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযান পরিচালনার যৌক্তিকতা ও কৌশল ব্যাখ্যা করলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। এই পদক্ষেপ শুধু সামরিক নয়, সামাজিকভাবেও গভীর তাৎপর্য বহন করে, যা নারী নেতৃত্বের প্রতি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আস্থার প্রতীক।
সুপ্রিম কোর্টে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিলেন কর্নেল সোফিয়া (Operation Sindoor)
ভারতের সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশনে মহিলাদের নিয়োগের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে যে ঐতিহাসিক মামলা চলে, সেখানে এক প্রধান দৃষ্টান্ত হিসাবে উঠে এসেছিল কর্নেল সোফিয়ার নাম (Operation Sindoor)। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল— “যখন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তখন সেনার স্থায়ী কমিশনে মহিলা অফিসারদের নিয়োগে আপত্তির প্রশ্নই ওঠে না।” ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনীর সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কর্নেল সোফিয়া। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া এই অফিসার আজ ভারতীয় সেনার (INDIAN ARMY) সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক।
সেনার মুখ হয়ে উঠলেন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ(Operation Sindoor)
মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের মাটিতে চালানো অপারেশন সিঁদুর-এর পর বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে সেনার পক্ষ থেকে অভিযান নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন কর্নেল সোফিয়া ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ (Operation Sindoor)। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কোনও পুরুষ অফিসার নয়, বরং এই দুই উচ্চপদস্থ মহিলা— যা প্রমাণ করে ভারতীয় বাহিনী নারী নেতৃত্বকে শুধু সম্মানই করছে না, সঠিক সময় তার দায়িত্বও তুলে দিচ্ছে।তাঁরা স্পষ্ট ভাষায় জানান, “এই অপারেশন ছিল আত্মরক্ষামূলক এবং ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির আওতায় পরিচালিত। শত্রু ঘাঁটিতে হামলার কৌশল, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পরবর্তী কূটনৈতিক প্রস্তুতির বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেন তাঁরা।”

আরও পড়ুন: Operation Sindoor : মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’, সকালে কেমন ছবি ছিল পাকিস্তানে?
আন্তর্জাতিক সামরিক নেতৃত্বে ভারতের মুখ(Operation Sindoor)
১৯৭৪ সালে গুজরাতের বডোদরায় জন্মগ্রহণ করেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি (Operation Sindoor)। ১৯৯৭ সালে জৈব রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘ ২৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি সেনার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবার জাতীয় শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। ওই বছর ভারতের পুণেতে আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক মহড়ায় (FTX) নেতৃত্ব দেন কর্নেল সোফিয়া। ১৮টি দেশের সেনা উপস্থিত ছিল ওই মহড়ায়— যার মধ্যে ছিল জাপান, চিন, আমেরিকা, রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্র। এই আন্তর্জাতিক মহড়ায় প্রথমবার কোনও দেশের তরফে একজন মহিলা অফিসার নেতৃত্বে ছিলেন, এবং তিনি ছিলেন ভারতের কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। সেনার অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পর থেকে সেনার উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ, কৌশলগত নির্দেশ, ও সিগন্যাল প্ল্যানিং-এ তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ(Operation Sindoor)
সেনার সাংবাদিক সম্মেলনে কর্নেল সোফিয়ার পাশে ছিলেন বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। তিনিও ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে অপারেশন সংক্রান্ত আকাশপথে ব্যবহৃত কৌশল, ড্রোন প্রতিরোধ ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে ব্যাখ্যা দেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্তার কথায়, “ব্যোমিকার বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনা দেখিয়ে দিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার প্রযুক্তিগত স্তর কতখানি আধুনিক এবং দক্ষ।”
নারীশক্তির বার্তা(Operation Sindoor)
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাংবাদিক সম্মেলনে দু’জন মহিলা অফিসারকে সামনে আনা এক সাংকেতিক ও বাস্তবিক বার্তা(Operation Sindoor)। নারী অফিসাররা শুধু যুদ্ধের অংশ নন, কৌশল নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের মুখ হিসেবেও এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন।প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কর্ণধার ঘোষ বলেন, “সেনা এই বার্তা দিল— ‘নারী শুধু সীমান্তে নয়, নেতৃত্বেও সমান।’ কর্নেল সোফিয়া ও ব্যোমিকার উপস্থিতি কেবল প্রতীক নয়, ভবিষ্যতের দিশা।” সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে ভারত তার শক্তি, প্রস্তুতি এবং প্রতিরক্ষা কৌশলের পাশাপাশি নারী নেতৃত্বের উপর আস্থা দেখিয়েছে। কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ সেই আস্থার বাস্তব প্রতিফলন। ভারতীয় সেনার ইতিহাসে এই অধ্যায় শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব নয়, নারীশক্তির এক সাহসী প্রত্যয়ও।