ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান সরকার আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ১৮ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে(Pakistan Defence Budget)। শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের এই পদক্ষেপকে বর্তমান ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিরক্ষা বরাদ্দে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি (Pakistan Defence Budget)
পাকিস্তানে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয় প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে(Pakistan Defence Budget)। জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজেট পেশ করা হয় জাতীয় পরিষদে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জ়ারদারি ও তাঁর দলের কয়েকজন সদস্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (Shehbaz Sharif) ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানেই প্রতিরক্ষা বরাদ্দে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ দাঁড়াতে চলেছে প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি পাকিস্তানি রুপিতে।
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রবণতা(Pakistan Defence Budget)
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল ১.৮ লক্ষ কোটি রুপি(Pakistan Defence Budget)। তার আগের বছর সেটি ছিল ১.৬ লক্ষ কোটি। ধারাবাহিকভাবে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রবণতা অনেক পুরনো হলেও, এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় এক জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে সিন্ধু জলচুক্তি পর্যালোচনার পথে হাঁটে এবং অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।এই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই অসামরিক মহড়া ও নাগরিক সতর্কতা কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা নতুন করে উত্তেজনা উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: Pakistan Airspace : কেন পাক আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে বিদেশি বিমান সংস্থা গুলি?
আর্থিক ভারসাম্যে চাপ(Pakistan Defence Budget)
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পাকিস্তানের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ যায় ঋণ পরিশোধে(Pakistan Defence Budget)। এরপরই স্থান পায় প্রতিরক্ষা খাত। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সম্প্রতি পলিসি রেটে কাটছাঁট করেছে, যা রাজস্ব আয় কমাতে পারে। এমন অবস্থায় প্রতিরক্ষা খাতে এহেন বিপুল ব্যয়ের সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক ভারসাম্যে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ না বাড়িয়ে কেন প্রতিরক্ষা খাতকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? বিরোধীরা মনে করছে, সরকার অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্বলতা ঢাকতে জাতীয় নিরাপত্তার কথা সামনে এনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বড় সংঘাত?(Pakistan Defence Budget)
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে(Pakistan Defence Budget)। কূটনৈতিক মহলের অভিমত, আলোচনার মাধ্যমেই দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি, নচেত দক্ষিণ এশিয়ায় আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।সামগ্রিকভাবে, পাকিস্তানের বাজেট ঘোষণার আগেই প্রতিরক্ষা খাতে এই বিপুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলেই আশঙ্কা। এখন দেখার, ভারত কীভাবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহল কী ভূমিকা নেয়।