ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা অঙ্গনে পাকিস্তানের সামরিক নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় দেখা যাচ্ছে—চিনের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা (Pakistan Dependency on China)। সাম্প্রতিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর এক রিপোর্টে উঠে এসেছে, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান আমদানি করা অস্ত্রের ৮১ শতাংশই এসেছে চিন (Xi Jinping) থেকে। এই সংখ্যা পূর্ববর্তী সময়ে ছিল ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ইসলামাবাদের সামরিক নীতিতে এখন কার্যত ড্রাগনের ছায়া স্পষ্ট।
পাকিস্তানের জন্য ভবিষ্যতের বিপদ (Pakistan Dependency on China)
এই অবস্থান ভারতের (Narendra Modi) জন্য শুধুই উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা স্তরে নতুন কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। অনেক প্রাক্তন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার মতে, এটি পাকিস্তানের জন্য ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং ভারত এটিকে ‘শাপে বর’ হিসাবেও দেখতে পারে।
চিনা অস্ত্র ও প্রযুক্তি নির্ভরতা (Pakistan Dependency on China)
পাকিস্তান বর্তমানে চীনের কাছ থেকে যুদ্ধজাহাজ, জে-১৭ যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, নজরদারি ড্রোন, ট্যাঙ্ক ইত্যাদি বিপুল পরিমাণে কিনছে (Pakistan Dependency on China)। সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে উল্লেখযোগ্য ‘J-35A’ স্টেলথ যুদ্ধবিমানের চুক্তি, যার অধীনে ইসলামাবাদ চীন থেকে ৪০টি পঞ্চম প্রজন্মের জেট সংগ্রহের পথে রয়েছে। এতকিছুর পরেও, দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির ক্ষেত্রে পাকিস্তান এখনও অনেক পিছিয়ে। চীনের প্রযুক্তি, কাঁচামাল এবং ডিজাইন ছাড়া তারা কার্যত অস্ত্র উৎপাদনে অক্ষম।

পাকিস্তানের কৌশলগত ঝুঁকি (Pakistan Dependency on China)
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের কাছ থেকে এতটা নির্ভর হয়ে পড়া পাকিস্তানের জন্য বড় কৌশলগত ঝুঁকি। ভবিষ্যতে চীন রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে চাইলে অস্ত্র সরবরাহের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে ইসলামাবাদকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, চীনা অস্ত্র এখনও পর্যন্ত বাস্তব রণক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি, যার ফলে এগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতের জিম্মি (Pakistan Dependency on China)
চীনের তৈরি অস্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা রাওয়ালপিন্ডিকে একরকম ‘ভবিষ্যতের জিম্মি’ করে তুলছে (Pakistan Dependency on China)। আর্থিক দিক থেকে দুর্বল পাকিস্তান এই অবস্থানে খুব একটা বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে না। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী থাকলেও, পরমাণু কর্মসূচি ও সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় ইসলামাবাদ এখন চীনমুখী।
আত্মনির্ভরতার পথে ভারত (Pakistan Dependency on China)
পাকিস্তানের এই নির্ভরতাকে টেক্কা দিতে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি এখন আত্মনির্ভরতা ও বহুমুখীকরণের দিকে (Pakistan Dependency on China)। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে রণতরী, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও হেলিকপ্টার। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় দেশের বেসরকারি খাতকেও সামরিক উৎপাদনে অংশ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানি (Pakistan Dependency on China)
ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানির চিত্রও বদলে গেছে। আগে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা থাকলেও, এখন ফ্রান্স, আমেরিকা ও ইজরায়েলের মতো দেশের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় চুক্তি করা হচ্ছে। রাফাল, অ্যাপাচে হেলিকপ্টার, টাভোর রাইফেল—সবই এই বহুমুখী নীতির ফল। পাশাপাশি, ভারতের লক্ষ্য এখন অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হওয়া। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ইতিমধ্যেই ফিলিপিন্সে রফতানি হয়েছে, এবং পিনাকা রকেট সিস্টেম নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স।
বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান (Pakistan Dependency on China)
চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা পাকিস্তানের ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা স্বাবলম্বিতাকে সংকটে ফেলতে পারে। অন্যদিকে, ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কেবল আত্মনির্ভরতার পথেই হাঁটছে না, বরং বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান শক্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। পাকিস্তান-চীন সামরিক আঁতাত যতই গভীর হোক না কেন, ভারতের বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলগত প্রতিক্রিয়াই এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও ভারসাম্য রক্ষা করবে।