ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার আবহ তৈরি করেছে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)। গত ৮ ও ৯ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আকস্মিক হামলা শুধু সামরিক পরিকাঠামোই নয়, বরং পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যদিও দুই দেশই সরাসরি পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, তবে বিভিন্ন সূত্র, উপগ্রহচিত্র, এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্যে ঘটনার গুরুত্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
পরিকল্পিত স্ট্রাইক, লক্ষ্যবস্তু বিতর্কে মোড় নেয় (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
ভারতীয় বিমানবাহিনীর (INDIAN ARMY) তরফে জানানো হয়, অত্যন্ত নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করেই এই হামলা চালানো হয়। ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশন এয়ার মার্শাল ভারতী জানান, “সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট শত্রু স্থাপনায় হামলা হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে লক্ষ্য করে হামলা করা হয়নি।” কিন্তু পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের একাংশ, ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSI) এবং ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরছে।
নুর খান ঘাঁটি, বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
রাওয়ালপিন্ডির কাছে অবস্থিত নুর খান বিমানঘাঁটি পাকিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)। সূত্রের দাবি, এই ঘাঁটির আশপাশেই রয়েছে ইসলামাবাদের একটি বড় আণবিক অস্ত্রভাণ্ডার। ওই ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের নিখুঁত আঘাতের ফলে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই খবর। নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে মুখ খুলেছেন সিআইএ-র প্রাক্তন কর্মকর্তা ডেরেক গ্রসম্যান। তাঁর দাবি, “নুর খানে যেভাবে একের পর এক আঘাত হানা হয়েছে, তাতে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা অমূলক নয়। কিছু অংশে আণবিক লিকেজ শুরু হতে পারে।” এর সঙ্গেই বিশ্ব জুড়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: IMF Loan For Pakistan : আইএমএফ-এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেল পাকিস্থান! আড়াল করলো ঋণের পরিমাণ
ইসলামাবাদে মার্কিন বিমান, তেজস্ক্রিয়তা যাচাই? (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
ঘটনার পরপরই ইসলামাবাদে অবতরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বিশেষ বিমান—Beechcraft B-350 Aerial Measuring System। এটি মূলত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রভাব নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সালের জাপানের ফুকুশিমা দুর্ঘটনার সময়ও এই বিমান ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।‘ফ্লাইটট্রেডার২৪’ ট্র্যাকিং সাইটে এই বিমানটির গতিবিধি ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিমানের উপস্থিতি থেকেই স্পষ্ট হয় যে আন্তর্জাতিক মহলে সম্ভাব্য পরমাণু বিকিরণ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও ওয়াশিংটন বা ইসলামাবাদ—কোনও পক্ষই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

কিরানা পাহাড় ও সরগোদা, আড়ালে থাকা বিপদ? (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
নুর খানের পাশাপাশি হামলা হয়েছে সরগোদা বিমানঘাঁটিতেও (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)। এই ঘাঁটির ২০ কিমি দূরে অবস্থিত কিরানা পাহাড়, যেখানে পাকিস্তানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক সুড়ঙ্গ থাকার তথ্য রয়েছে বিভিন্ন গ্লোবাল প্রতিরক্ষা রিপোর্টে। যদিও ভারতীয় বায়ুসেনা জানায়, কিরানায় কোনও হামলা হয়নি, তবুও কৌশলগত দিক থেকে এই অঞ্চলের উপর নজরদারি ছিল বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ এবং যুদ্ধবিরতি (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নাটকীয় মোড় নিতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই দ্রুত সক্রিয় হয় মার্কিন প্রশাসন (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)। সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স, বিদেশ সচিব মার্কো রুবিয়ো, এবং হোয়াইট হাউস চিফ অফ স্টাফ সুসি উইলিস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ছিলেন। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনার ইঙ্গিত মেলায় ভান্স সরাসরি ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।ফোনালাপের একদিন পরেই, ১০ মে দুই দেশের ডিজিএমও পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছায় ভারত ও পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তান সরকার ডিজিএমও পর্যায়ের এই আবেদনের কথা অস্বীকার করেছে।
মিশরের ভূমিকা ও বিতর্ক (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
এদিকে হামলার পর পাকিস্তানে অবতরণ করে মিশরের একটি সামরিক পরিবহণ বিমান। গুজব ছড়ায় যে, ওই বিমানে বোরন রয়েছে, যা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু চিত্র ও পোস্ট সেই দাবি জোরদার করেছে। যদিও এই তথ্য সরকারি স্তরে নিশ্চিত হয়নি।
মোদীর কড়া বার্তা, ‘আর নয় পরমাণু হুমকি’ (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)
যুদ্ধবিরতির পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “পাকিস্তানের পরমাণু হুমকি আর সহ্য করবে না ভারত (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)।” তাঁর এই বক্তব্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করছেন, এই মন্তব্যই ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের এই হামলা ছিল কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং কৌশলগত বার্তা।‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের সামরিক ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে—সুনির্দিষ্ট ও কৌশলগত হামলার মাধ্যমে শত্রুর মনোবল ভেঙে দেওয়ার একটি নিখুঁত উদাহরণ। তবে এই ঘটনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, পারমাণবিক সংঘাতের ছায়া একবার আরও ফিরে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায়।যদিও দুই দেশ এখন যুদ্ধবিরতির পথে, তবুও তেজস্ক্রিয়তা, মার্কিন পর্যবেক্ষণ বিমান, এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আগ্রহ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখনও পুরোমাত্রায় স্থিতিশীল নয়। পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারে আঘাত সত্যিই হানলে, তার প্রতিক্রিয়া যে কত ভয়াবহ হতে পারত, সেটাই এখন ভাবিয়ে তুলছে বিশ্বকে (Pakistan Nuclear Arsenal Leakage)।