ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পানামা খাল ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তাপ ফের চড়ছে (Panama Canal)। বিশ্বের অন্যতম কৌশলগত এই জলপথে চিনা প্রভাব ঠেকাতে এবার সরব হল আমেরিকা। পানামা সফরে গিয়ে পেন্টাগনের প্রধান এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—চিনের প্রভাবের অবসান ঘটিয়ে আমেরিকা পানামা খাল ‘ফিরিয়ে’ নেবে।
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা (Panama Canal)
সাম্প্রতিক সফরে পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো-র সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন হেগসেথ (Panama Canal)। এই বৈঠকে চিনের ভূমিকাকে সামনে রেখে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের পরে হেগসেথ (Pete Hegseth) জানান, “চিন পানামা খাল তৈরি করেনি, পরিচালনাও করে না। তারা যেন এই খালকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই হবে।”
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ পানামা খাল (Panama Canal)
পানামা খাল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে (Panama Canal)। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই খালের ভূমিকাই একে করে তুলেছে অমূল্য সম্পদ। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫টি জাহাজ এই খাল ব্যবহার করে, যার মধ্যে বহু আমেরিকান বাণিজ্যিক জাহাজও রয়েছে। এই খালের উপরে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধের বাণিজ্য প্রবাহের উপর বড়সড় প্রভাব বিস্তার।

চিনা প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ (Panama Canal)
গত কয়েক বছরে চিন এই অঞ্চলে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে (Panama Canal)। পানামার কিছু বন্দর ও সংযোগ পরিকাঠামোয় চীনা সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ রয়েছে, যা নিয়ে শুরু থেকেই ওয়াশিংটনের উদ্বেগ ছিল। ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসনের আমল থেকেই চিনের এই প্রভাব নিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল, এবং সেই ধারাই বজায় রেখেছেন বর্তমান প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ।তিনি বলেছেন, “পানামা খালে চিনের উপস্থিতি শুধু আমেরিকার নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক। আমরা পানামা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে খালকে নিরাপদ রাখতে চাই।”

সম্ভাব্য নতুন চুক্তি? (Panama Canal)
হেগসেথ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ১৯৯৯ সালের পুরনো যুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করে পানামার সঙ্গে নতুন কোনও চুক্তির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে (Panama Canal)। উল্লেখযোগ্য, ১৯৯৯ সালেই আমেরিকা পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে পানামা সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে সেই সিদ্ধান্ত ফের পুনর্বিবেচনার পথে হাঁটছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্পের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি (Panama Canal)
প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামা খাল নিয়ে সরব হন। তাঁর অভিযোগ ছিল, আমেরিকান জাহাজগুলির থেকে বেআইনি ভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি চিনের ‘প্রভাব বৃদ্ধির অপচেষ্টা’কেও আমেরিকার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন।
আমেরিকা-চিন উত্তেজনা
পানামা খালকে কেন্দ্র করে আমেরিকা-চিন উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেতে চলেছে বলেই আন্তর্জাতিক মহলের অনুমান। যেখানে একপাশে চিন নিজের উপস্থিতি জোরদার করছে বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো গড়ে তুলে, অন্যদিকে আমেরিকা ফের পুরনো আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সক্রিয় হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, পানামার বর্তমান সরকার এই দুই শক্তিধর দেশের টানাপোড়েনে কোন কূটনৈতিক পথ বেছে নেয়। তবে এটুকু স্পষ্ট—পানামা খাল হয়ে উঠছে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।