ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: হাবড়ায় (Habra Incident) সম্পত্তির লোভে বাবা-মাকে পরিকল্পনা করে খুন করে মেয়ে জামাই। ভাড়া করা হয়েছিল সুপারি কিলার। ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২০২০ সালের সেই খুনের ঘটনায় সাজা ঘোষণা করল বারাসত আদালত। সোমবার ওই দম্পতি ও শার্প শুটারকে যাবজ্জীবন সাজা শোনানো হল।
যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা (Habra Incident)
‘সুপারি কিলার’ দিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করিয়েছে নিজের মেয়ে জামাই (Habra Incident)। নৃশংস এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন মেয়ে ও জামাই। গ্রেফতার হয়েছিল সুপারি কিলারও। টানা সাড়ে চার বছর মামলা চলার পর অবশেষে সোমবার হারবার সেই ‘জোড়া হত্যা’ মামলায় মেয়ে নিবেদিতা সাধু ও তার স্বামী বান্টি সাধু এবং সুপারি কিলার অজয় দাসের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল বারাসত জেলা আদালত ৷ সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমান। অনাদায়ে আরও ছ’মাসের কারাদণ্ডের সাজাও শুনিয়েছেন জেলা আদালত।
সম্পত্তি বিক্রির জন্য চাপ (Habra Incident)
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাবড়া (Habra Incident) থানার কুমড়া কাশিপুর এলাকায় থাকতেন বৃদ্ধ দম্পতি রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী লীলারানি মণ্ডল। বাজার থেকে সাত লক্ষ টাকার বেশি দেনা হয়ে গিয়েছিল জামাই বান্টি সাধুর। সেজন্য মেয়ে নিবেদিতা সাধু ও জামাই দীর্ঘদিন ধরেই সম্পত্তি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিল ওই দম্পতিকে। কিন্তু ওই দম্পতি কোনওভাবেই মেয়ে-জামাইয়ের কথা শোনেননি। শ্বশুর-শাশুড়ি সরে গেলে সম্পত্তি তাদের। তাই ওই দম্পতিকে খুনের ছক কষে বান্টি।
আরও পড়ুন: Ganga-Padma Water Sharing: গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি পুনর্নবীকরণ! ভারত সফরে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল
পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাড়ির ছাদ বেয়ে নীচে নেমে ভাড়াটে খুনি অজয় সেনা কর্মী দম্পতিকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করে। কালো মুখোশ পরে অজয় সেদিন রাতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিল। ওই দম্পতির মাথায় ও বুকে গুলি করা হয়েছিল। পুলিশ ওই তিন জনকেই গ্রেপ্তার করে। ভাড়াটে খুনি অজয় দাসের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ওই দম্পতি খুনের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও। অজয় দাস নামে এক ভাড়াটে খুনিকে তারা এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করেন। তাতে সহযোগিতা করেন মেয়ে নিবেদিতাও।
‘সুপারির কল রেকর্ড’ সংগ্রহ
এরপর নিবেদিতা ও বান্টিকে জেরা শুরু হয়। তখনই তাদের পরিকল্পনার কথা জানা যায়। ভাড়াটে খুনি অজয়কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসার রামকৃষ্ণ গুড়িয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করে চার্জশিট, সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেন। পাশাপাশি অজয়ের মোবাইল ফোনে থাকা ‘সুপারির কল রেকর্ড’ সংগ্রহ করে ধৃতদের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ফরেনসিক পরীক্ষা করালে মিলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া পোড়া সিগারেটের ফিল্টার থেকে ডিএনএ প্রোফাইল বিশ্লেষণ করলে তাও বান্টি ও অজয়ের সঙ্গে মেলে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কার্তুজের খোলের সঙ্গেও খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রর ব্যালিস্টিক ম্যাচ করে যায়।
আরও পড়ুন: Chopra Case: ৪ দিন পার, এখনও অধরা মুজিবুর রহমান
তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত
তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর ভিত্তিতে গত শুক্রবার তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বারাসতের পঞ্চম এডিজে আদালতের বিচারক দিপালী শ্রীবাস্তব। এরপর এদিন দোষীদের সশ্রম যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয়। সরকারি আইজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২৬জন সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় দোষীদের সশ্রম যাবজ্জীবন-সহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে পাঁচ মাস কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়াও অস্ত্রআইনে তিন ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”