ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ন’টি জঙ্গিঘাঁটিতে প্রিসিশন স্ট্রাইক চালিয়ে একপ্রকার বিস্মিত করে দিল ভারত (Operation Sindoor)। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এই সামরিক অভিযানে লক্ষ্যবস্তু করা হয় লস্কর-ই-তৈবা ও জইশ-ই-মহম্মদের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের প্রধান ঘাঁটিগুলিকে। ভারতীয় ফৌজ ব্যবহার করে HAMMER ও SCALP মিসাইল — যার মধ্যে স্ক্যাল্প আবার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত, যা গভীর এলাকায় নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।
ধ্বংস লীলায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান (Operation Sindoor)
এই হামলায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্রাবাদের বিলাল মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে (Operation Sindoor)। বহু দিন ধরেই এই মসজিদকে জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ধর্মীয় স্থান হলেও, এখানে মৌলবাদ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল আন্তর্জাতিক মহলের তরফেও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, মসজিদের গম্বুজ উড়ে গিয়েছে, লোহার কাঠামো বেরিয়ে এসেছে, এবং আশপাশের এলাকাগুলি কড়া নিরাপত্তায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের তরফে।
সেনা তৎপরতা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারি (Operation Sindoor)
হামলার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ সেনাকর্তারাও (Operation Sindoor)। ছবিতে ধরা পড়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাদা গাড়ির পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একে-৪৭ হাতে পাক জওয়ান। ইসলামাবাদ এই অভিযানে ‘নাগরিক নিহত’-এর অভিযোগ তুললেও ভারত জানিয়ে দিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র জঙ্গিঘাঁটি, ধর্মস্থান বা সাধারণ মানুষের উপর নয়।

প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতিতে পাকিস্তান(Operation Sindoor)
এই হামলার পরেই ইসলামাবাদ সুর চড়িয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (Shehbaz Sharif) হুমকি দিয়েছেন প্রত্যাঘাতের। এদিকে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্টে উঠে এসেছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের লাহোর সংলগ্ন মুরিদকের হাইওয়েতে একের পর এক ট্যাঙ্ক চলাচল করছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, হয় এগুলি সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য, নয়তো নয়াদিল্লির আরও আক্রমণের আশঙ্কায় নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বহওয়ালপুরে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়(Operation Sindoor)
এছাড়া পাকিস্তানের বহওয়ালপুর অঞ্চলে, যেখানে লস্কর-ই-তৈবার ঘাঁটি ছিল বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ, সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, সেখানে একটি মাদ্রাসায় হামলায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও, ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী সেই মাদ্রাসাই ছিল জঙ্গিদের ছদ্মবেশী ঘাঁটি। হামলার পর নিহতদের কফিনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা মোড়ানো অবস্থায় ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তবে পরিচয় প্রকাশ করেনি ইসলামাবাদ।

আরও পড়ুন: SCALP Missile : ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ আঘাত হানে ঘাতক মিসাইল SCALP! কতটা ভয়ঙ্কর এই মিসাইল?
‘অপারেশন সিঁদুর’ চলল মাত্র ২৫ মিনিট(Operation Sindoor)
সেনার বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ মিনিটে শুরু হয়ে ১টা ৩০ মিনিটে শেষ হয় এই অভিযান। মাত্র ২৫ মিনিটে বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু, বাগ, কোটলি, সিয়ালকোট এবং মুজফফরাবাদ—এই ন’টি এলাকায় নিশানায় নেয় ভারতীয় ফৌজ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম না করেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে প্রিসিশন স্ট্রাইক চালানো হয়।
সেনা মুখপাত্রের বিবৃতি(Operation Sindoor)
সেনা মুখপাত্র উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, এই সমস্ত জায়গাই ছিল সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র মজুদের কেন্দ্র। শুভান আল্লাহ্ মসজিদ, বিলাল মসজিদ, ও কোটলির মসজিদ — তিনটিই দীর্ঘদিন ধরে লস্কর ও জইশের সক্রিয় ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর, এই অভিযান ছিল প্রতিশোধ এবং প্রতিরোধের অংশ।

যুদ্ধ নয়, কিন্তু সন্ত্রাসে আপস নয়(Operation Sindoor)
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই অভিযানের পর রাতভর বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শীর্ষ কর্তাদের অবহিত করেন ডোভাল। তাঁর বক্তব্য ছিল, ভারত শান্তি চায়, তবে সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করবে না। প্ররোচনা এলে প্রত্যাঘাত হবে দ্বিগুণ।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের বার্তা(Operation Sindoor)
‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধুমাত্র সামরিক পদক্ষেপ নয়, এটি ভারতের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষার সমন্বিত শক্তির প্রতিফলন। ইসলামাবাদ ও পিওকে-র জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে ভারতের নির্ভুল আঘাত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তাকে আরও জোরদার করল। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানে পাকিস্তান যেমন চাপে পড়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও বুঝে নিয়েছে ভারতের নতুন নিরাপত্তা নীতি — “প্রথমে সাবধান, পরে কঠোর প্রতিক্রিয়া”।