ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গত কয়েক বছরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে (Pinaka MBRL Weapon)। দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে নানা ধরণের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট সিস্টেম। তারই একটি গর্বের নাম ‘পিনাকা মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম’ (Pinaka MBRL Weapon)। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) কর্তৃক উদ্ভাবিত এই সিস্টেম ভারতীয় সেনাবাহিনীর বহুমাত্রিক আক্রমণক্ষমতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নামকরণ কীভাবে? (Pinaka MBRL Weapon)
‘পিনাকা’ নামটি নেওয়া হয়েছে হিন্দু পুরাণের দেবতা শিবের ধনুক ‘পিনাক’-এর নাম থেকে (Pinaka MBRL Weapon)। এই নামকরণ শুধু প্রতীকী নয়, বরং এক আভাস দেয় এর বিধ্বংসী শক্তির। ১৯৮০-এর দশকে আর্টিলারি অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের প্রয়োজনে এই প্রকল্পের সূচনা হয় এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে প্রথমবার সীমিত আকারে পিনাকার ব্যবহার ঘটে। পরবর্তীতে ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে সেনাবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পিনাকার ক্ষমতা কতটা? (Pinaka MBRL Weapon)
পিনাকা একটি স্বয়ংক্রিয় মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম, যা একসঙ্গে ১২টি রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারে (Pinaka MBRL Weapon)। এটি একটি মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ভিত্তি করে নির্মিত এবং সহজেই দ্রুত মোতায়েন করা যায়।পিনাকার রেঞ্জ হল Mk-I এর ক্ষেত্রে ৩৭.৫ কিমি, Mk-I Enhanced এর ক্ষেত্রে ৪৫ কিমি, Mk-II এর ক্ষেত্রে ৬০ কিমি এবং Mk-II ER (Extended Range) এর ক্ষেত্রে ৯০ কিমি। পিনাকার সর্বশেষ সংস্করণে GPS ও NavIC সমর্থিত ট্র্যাজেক্টরি কারেকশন সিস্টেম (TCS) সংযুক্ত, যার ফলে লক্ষ্যভেদে নির্ভুলতা মাত্র ৭ মিটারের মধ্যে রাখা যায়। হাই এক্সপ্লোসিভ প্রি-ফ্র্যাগমেন্টেড (HEPF), ইনসেনডিয়ারি, স্মোক, ইলিউমিনেশন ও Area Denial Munition (ADM) ধরনের রকেট। মাত্র ৪৪ সেকেন্ডে একসঙ্গে ১২টি রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারে। এটি ৮x৮ টাট্রা ট্রাকে মাউন্ট করা হয়, যার ফলে এটি কঠিন ভূখণ্ডেও দ্রুত চলাচল করতে সক্ষম।
পিনাকার প্রধান কাজ কী? (Pinaka MBRL Weapon)
পিনাকার প্রধান কাজ হল ব্যাটেলফিল্ড প্রিপারেশন বা যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করা—শত্রু ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ, অস্ত্র ও রসদ ধ্বংস করা এবং শত্রু সেনাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া (Pinaka MBRL Weapon)। এটি প্রচলিত আর্টিলারির তুলনায় অধিক কার্যকর, দ্রুত এবং বিস্তৃত এলাকা আঘাত করার ক্ষমতা রাখে। ভারতের উত্তর সীমান্তে চীনা আগ্রাসন ও পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানি হুমকির প্রেক্ষাপটে পিনাকা ভারতের কৌশলগত প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আত্মনির্ভর অস্ত্র পিনাকা (Pinaka MBRL Weapon)
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL) এবং ইন্ডিয়ান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিজ-এর সঙ্গে ১০,১৪৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে (Pinaka MBRL Weapon)। এর আওতায় নতুন ADM টাইপ-১ এবং HEPF Mk-I রকেটগুলির উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই অর্থনৈতিক বিনিয়োগ দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভরতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: Turkish Drones: তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা পাকিস্তানের! দাবি ভারত সরকারের
আন্তর্জাতিক আগ্রহ ও রপ্তানির সম্ভাবনা
পিনাকার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে আর্মেনিয়া, যেটি ২০২৩ সালে এটি কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়াও ফ্রান্স ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশও এই সিস্টেমে আগ্রহী। ফ্রান্সের সঙ্গে ২০২৫ সালের ভারত-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা সম্মেলনে পিনাকা রপ্তানির আলোচনা হয়। এই পরিস্থিতি ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিক নির্দেশ করে।
আরও পড়ুন: Cyber Threat: পাকিস্তান থেকে হামলার আশঙ্কা, অনাকাঙ্ক্ষিত লিংকে ক্লিক না করার পরামর্শ
পিনাকার ভবিষ্যৎ
ডিআরডিও ইতিমধ্যে ১২০ কিমি ও ৩০০ কিমি রেঞ্জের পিনাকা-III এবং ‘পিনাকা-নেভাল ভার্সন’ তৈরির গবেষণা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু Hypersonic বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।পিনাকা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শুধু একটি রকেট লঞ্চার নয়, বরং ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি, আত্মনির্ভরতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া, মোবিলিটি এবং বহু রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষমতার কারণে এটি ভবিষ্যতের সংঘর্ষে ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠবে।