ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শান্তি চুক্তির শর্তে সেনা মোতায়েনের ইঙ্গিত (British Troops To Ukraine)। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন, যদি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি হয়, তাহলে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত ব্রিটেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে এতে ব্রিটিশ সেনাদের ‘বিপদের মুখে’ পড়তে হতে পারে, যদি ভ্লাদিমির পুতিন আবার আক্রমণ করেন।
প্রথমবারের মতো তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ব্রিটিশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউক্রেনে পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন (British Troops To Ukraine)। তার এই মন্তব্য এসেছে সোমবার প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের জরুরি বৈঠকের আগে।
ইউরোপের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা (British Troops To Ukraine)
ইউরোপের নেতারা (British Troops To Ukraine) এই বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার কৌশল ঠিক করবেন। পাশাপাশি, আমেরিকা যদি ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে তার প্রতিশ্রুতি কমিয়ে দেয়, তাহলে ইউরোপ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটাও আলোচনার বিষয়। স্টারমার বলেছেন, এই সংকট ইউরোপের জন্য ‘প্রজন্মের সেরা চ্যালেঞ্জ’ এবং অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন।
তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফে লিখেছেন, ব্রিটেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। এর অংশ হিসেবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন পাউন্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। স্টারমার আরও বলেন, সামরিক সহায়তার পাশাপাশি, প্রয়োজনে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রিটিশ সেনাদের মোতায়েন করতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: Ex-Mauritius PM Arrested: গ্রেফতার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী! বেআইনি লেনদেনকাণ্ডে চাঞ্চল্য দেশে
“আমি এটা হালকাভাবে বলছি না। সেনাদের বিপদের মুখে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় আমি গভীরভাবে অনুভব করি,” স্টারমার বলেন। “কিন্তু ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর সেটা আমাদের নিজেদের দেশকেও রক্ষা করবে।” তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি যেন আরেকটি বিরতি মাত্র না হয়ে যায়, যেখানে পুতিন আবার আক্রমণ শুরু করবে।”
ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর বিষয়ে পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত (British Troops To Ukraine)
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা প্রকাশ্যে সেনা পাঠানোর কথা কখনও বিবেচনা করেননি (British Troops To Ukraine)। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিটেন এখনই তার প্রয়োজনীয় সামরিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা বাজেট ৬৪ বিলিয়ন পাউন্ড, যা জিডিপির ২.৩৩ শতাংশ। কিন্তু সরকারি সূত্র বলছে, যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠিত হয়, তাহলে ব্রিটেন সেখানে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক।
প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে চাপ
লেবার সরকার প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৫ শতাংশে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু কবে নাগাদ তা করা হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেয়নি (British Troops To Ukraine)। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের সব দেশকে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৫ শতাংশে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সামরিক কর্তারা এই ব্যয় ধাপে ধাপে ২.৬৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় জোর দিলেন স্টারমার
এর আগে স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনের নিরাপত্তায় ব্রিটিশ সেনারা ভূমিকা নিতে পারে। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে ইউরোপের দেশগুলোর দায়িত্ব বেশি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পুতিনকে নতুন করে হামলা থেকে বিরত রাখতে পারে।” স্টারমার আগামী মাসে ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সৌদি আরবে মার্কিন-রাশিয়া বৈঠক, ইউক্রেন নেই আলোচনায়
ট্রাম্প গত বুধবার পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সৌদি আরবে মার্কিন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা বৈঠক করবে বলে জানা গেছে। কিন্তু ইউক্রেনের কোনও কর্মকর্তাকে এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি, ইউরোপের নেতারাও হয়তো এই আলোচনায় অংশ নেবেন না। স্টারমার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “শান্তি কোনো বড় মূল্যে অর্জন করা যাবে না। ইউক্রেনকে অবশ্যই আলোচনার টেবিলে রাখতে হবে। নাহলে, আমরা পুতিনের এই অবস্থান মেনে নেব যে ইউক্রেন একটি স্বতন্ত্র দেশ নয়।”
আরও পড়ুন: Dhaka Theatre Festival: লালন স্মরণোৎসব, বসন্ত উৎসবের পর এবার বন্ধ বাংলাদেশে নাট্য উৎসব?
আফগানিস্তানের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চান না স্টারমার
স্টারমার জো বাইডেনের অধীনে ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, “আমরা আবার আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি চাই না, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছিল এবং আফগান সরকারকে বাদ দিয়েছিল। ”স্টারমার আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাইবেন।”
সেনা বাহিনীর সংকট ও বাজেটের চাপ
ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর সংখ্যা গত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই সংকটের মধ্যেই ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গত শুক্রবার ব্রিটেনের সেনা বাহিনীর প্রধানরা স্টারমারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। তারা দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সরকারি সূত্র বলছে, সেনা প্রধানরা সরাসরি প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর জন্য লবিং করেননি। বরং তারা প্রধানমন্ত্রীকে সামরিক বাহিনীর বর্তমান পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেছেন। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বাজেট দিয়ে ব্রিটেন তার প্রতিশ্রুত ন্যাটো সদস্যপদ, অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প এবং পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারবে না।
বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত
স্টারমারের এই মন্তব্য ব্রিটেনের বিদেশ নীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কূটনৈতিক আলোচনার ফল কী হয়, তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং রাশিয়ার সিদ্ধান্তের ওপর।
এদিকে, ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারকে প্রতিরক্ষা বাজেট ও সামরিক সক্ষমতা নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।