ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মেয়ের ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে পথে নেমে জুটল পুলিশের লাঠির ঘা। মিছিল করতে গিয়ে মাথা ফাটল, ভাঙল শাঁখা। আরজি কর কাণ্ডে মৃত তরুণী চিকিৎসকের মা-কে (Mother of Victim) নবান্ন অভিযানের দিন মারধরের অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তবে ঘটনার নেপথ্যে আদৌ দায়ী কারা? সত্যিই কি অভিযোগ যথার্থ? উঠছে একের পর এক প্রশ্ন।
নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ডাকা নবান্ন অভিযানে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল শহরের বুকে। পার্ক স্ট্রিট এলাকায় বিজেপি নেতাদের মিছিল রুখতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। মিছিলে বাধা পেয়ে রাস্তায় বসে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পল ও শঙ্কর ঘোষ-সহ বিজেপি নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: Nabanna: দৈনন্দিন কাজকর্ম লাটে ওঠার জোগাড়, বিরক্ত সাধারণ মানুষ কিন্তু কেন?
কলকাতা পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও উত্তেজনা এড়ানো যায়নি। শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিধানসভার বাইরে থেকেই রাজ্য সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি নেতারা। এরপর পার্ক স্ট্রিট মোড় পর্যন্ত মিছিল করে বিক্ষোভে বসেন তাঁরা।
বিচার চেয়ে পথে নির্যাতিতার পরিবার (Mother of Victim)
২০২৪ সালের এই দিনেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার বিচার চেয়ে এক বছর ধরে নির্বিচারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নির্যাতিতার মা-বাবা। শহরের মানুষ ও প্রশাসন যাতে সেই ঘটনা ভুলে না যায়, সেই লক্ষ্যেই এবারের ‘নবান্ন অভিযান’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল নির্যাতিতার পরিবারের (Mother of Victim) পক্ষ থেকে ।এই অভিযানে শামিল হয় বিজেপি নেতৃত্বও।
ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা
নবান্ন অভিযানের দিন শহরে ব্যাপক নিরাপত্তা জারি ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছিল ত্রি-স্তরীয় ব্যারিকেড। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়ায়। শুভেন্দু অধিকারী নিজেও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বাধা পেতেই মিছিলের রুট বদলে পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব।
শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, এই ঘটনায় কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছেন। তাঁর নিজের বুকে ইটের আঘাত লেগেছে বলেও জানান তিনি।
নির্যাতিতার মাকে মারধরের অভিযোগ (Mother of Victim)
মিছিলে অংশ নিতে এসে আহত হন নির্যাতিতার মা (Mother of Victim)। তাঁর অভিযোগ, মহিলা পুলিশ কর্মীদের লাঠির আঘাতে কপাল ফেটে যায় এবং হাতের শাঁখা ভেঙে যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে বাইপাস সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুভেন্দু অধিকারী পরে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান।
এই অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা চরমে। ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মা। তিনি বলেন, “মারধরের অভিযোগ সত্যি না মিথ্যা তা খতিয়ে দেখা হবে। নির্যাতিতার মা যদি অভিযোগ করেন, তদন্ত শুরু হবে। এমনকি অভিযোগ না-ও এলে, পুলিশ নিজে থেকেই তদন্ত করবে।”
আরজি কর কাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলেও, এখনও বিচার অধরা। গত এক বছরে শহরে নানা প্রতিবাদ হয়েছে, একাধিক মিছিল-সমাবেশও দেখেছে কলকাতা। কিন্তু বিচার আজও হয়নি। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—এই আন্দোলন কি শুধুই ন্যায়বিচারের দাবি, নাকি তার পেছনে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক রং?