ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখন পর্তুগালের হয়ে তিনটি উয়েফা টুর্নামেন্ট জিতেছেন (Portugal Win Nations League 2025)। রবার্তো মার্টিনেজের অধীনে আড়াই বছরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ২০টি গোল করেছেন।
পেনাল্টিতে স্পেনকে হারিয়ে পর্তুগালের নেশন্স লিগ জয়, রোনাল্ডোর তৃতীয় ট্রফি দেশের হয়ে (Portugal Win Nations League 2025)
৪০ পার করা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো চোখের জলে (Portugal Win Nations League 2025), পর্তুগালের হয়ে নেশন্স লিগ জিতে হাতে তুলে নিলেন নিজের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ট্রফি। এবং সেটা হল পর্তুগালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিবেশী স্পেনকে পেনাল্টিতে হারিয়ে।
রোনাল্ডো ৮৮ মিনিটে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান, কিন্তু তার আগেই তিনি নিজের দায়িত্ব শেষ করে গেছেন। ৬১ মিনিটে ক্রসবারের কাছ থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি। এটা ছিল তার ১৩৮তম আন্তর্জাতিক গোল, যেটা তার নিজেরই গড়া রেকর্ডকে আরও এগিয়ে দেয়। এই নেশন্স লিগ মরশুমে এটি ছিল রোনাল্ডোর নবম ম্যাচে অষ্টম গোল, শুধু সুইডেনের ভিক্টর গিওকারেসই তার থেকে এগিয়ে রয়েছেন। ৪০ বছরের রোনাল্ডো গত আড়াই বছর ধরে সৌদি আরবের ক্লাব আল-নাসরের হয়ে খেলছেন। তারপরে এসেও এই পারফরম্যান্স, অবিশ্বাস্য।
স্পেনের হারের ইতিহাসে নতুন সংযোজন (Portugal Win Nations League 2025)
২০২২ সালের বিশ্বকাপের পর এই প্রথম কোনও ট্রফি জিততে পারল না স্পেন (Portugal Win Nations League 2025)। ২০২৩-এ তারা নেশন্স লিগ ও ২০২৪-এ ইউরো কাপ জিতেছিল। এই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে ফেভারিট হয়ে উঠেছিল স্পেন। কিন্তু রোনাল্ডোর পর্তুগাল সেই জয়ের ধারাকে থামিয়ে দিল। ডিফেন্ডার নুনো মেন্ডেস স্পেনের তারকা লামিন ইয়ামালকে একা হাতে আটকে রাখেন এবং পাশাপাশি নিজেও একটি গোল করেন।
কী বললেন রোনাল্ডো? (Portugal Win Nations League 2025)
“পর্তুগালের হয়ে জেতা সবসময় স্পেশাল। আমি ক্লাবের হয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি, কিন্তু দেশের হয়ে জেতার থেকে বড় কিছু হয় না।” “এই কান্না দায়িত্ব শেষ করার আনন্দের,” বললেন তিনি (Portugal Win Nations League 2025)।
ইয়ামালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় রোনাল্ডোর (Portugal Win Nations League 2025)
ম্যাচের আগে রোনাল্ডো বলেছিলেন (Portugal Win Nations League 2025), “ক্রিশ্চিয়ানোর সঙ্গে কারও দ্বৈরথ এটা ঠিক না, এটা একদল বনাম অন্যদল।” তবুও ৪০ বছরের রোনালদো বনাম ১৭ বছরের স্পেনের ইয়ামাল—এই তুলনাটা চলছিলই। মেন্ডেসের ডিফ্লেক্টেড ক্রস থেকে নিজের ৯৩৮তম গোল করে, সবদিক থেকেই জয়ী হলেন রোনাল্ডো। প্রাক্তন ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার অ্যান্ড্রস টাউনসেন্ড বলেন, “এই কারণেই রোনাল্ডো এখনও মাঠে থাকেন। তিনি বক্সের শিকারি। বল কোথায় যাবে সেটা তিনি আগেই জানেন।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকেই ভেবেছিল রোনাল্ডো শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি সেমিফাইনালেও প্রভাব ফেলেছেন, আজকেও করলেন। এখনো তিনি বড় মঞ্চে ফারাক গড়ে দিতে পারেন।” বিশ্লেষক ক্যারেন কার্নি বলেন, “রোনাল্ডোর চোখ চকচক করছিল। মনে হচ্ছিল – ‘আর কে? আমি’।” তিনি আরও বলেন, “৩০ পেরোলেই সবাই বলে বয়স হয়ে গেছে। রোনাল্ডো ৪০-এ এসেও সব ধারণা ভুল প্রমাণ করছেন।”
ম্যাচে রোনাল্ডো বল ছুঁয়েছেন মাত্র ২২ বার, তবুও একাধিকবার ডিফেন্সে ফিরে এসে বল কেড়েছেন ইয়ামালের কাছ থেকে।স্পেনের এই তরুণ তারকা যিনি সেমিফাইনালে দুই গোল করেছিলেন, এদিন সেরাটা দিতে পারেননি। ইয়ামাল চারবার শট নেন, তার মধ্যে দুবার সেভ করেন ডিয়োগো কস্তা।
স্প্যানিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ গুইলেম বালাগুয়ে বলেন, “ইয়ামাল আজকের রাত থেকে অনেক কিছু শিখবে। আজ তিনি পুরোপুরি অদৃশ্য ছিলেন।”
মার্টিনেজ থাকবেন তো?
এই ট্রফিই পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্টিনেজের কোচিং জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের সঙ্গে কিছু না জিতে ২০১৩ সালে উইগানের হয়ে এফএ কাপ জেতার পর এটিই তার প্রথম ট্রফি। বালাগুয়ে বলেন, “প্রতিবেদন অনুযায়ী পর্তুগালের নতুন ফুটবল ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট মার্টিনেজকে চাইছেন না। তিনি হোসে মরিনহো কিংবা জর্জ জেসুসকে আনতে চাইছেন। কিন্তু এখন মার্টিনেজকে কীভাবে বাদ দেবেন?”
মার্টিনেজ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পর্তুগালের কোচ হন এবং চুক্তি আছে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বালাগুয়ে বলেন, “রোনাল্ডোকে আবার নিয়মিত গোলস্কোরারে পরিণত করেছেন তিনি। তার অধীনে রোনাল্ডোর গোল করার হার আগের সব কোচের চেয়ে ভালো”। তিনি আরও বলেন, “এই ট্রফি পাওয়া মানে তাকে সরানোর যেকোনও পরিকল্পনা শেষ। এখন আর তাকে বাদ দেওয়া যাবে না।”
কার্নি বলেন, “বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের পর এই পর্তুগিজ দলকেও গড়ে তুলেছেন মার্টিনেজ। তিনি বিশেষ কিছু করেন।” “রোনাল্ডো সহ বাকি খেলোয়াড়রাও ওনার সঙ্গে ইতিবাচকভাবে মিশে গেছে। এখন বিশ্বকাপে তাকে বিচার করা হবে। এর আগে সরিয়ে দিলে সেটা অন্যায় হবে।”
মেন্ডেসের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স
পর্তুগালের লেফট ব্যাক নুনো মেন্ডেস, মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস ও ভিটিনহা, এবং ফরোয়ার্ড গনসালো রামোস—allianz arena-তে আট দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ট্রফি জিতলেন। তারা প্যারিস সাঁ জার্মেইনের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন এই ভেন্যুতেই। আর এই ম্যাচে মেন্ডেস হলেন ম্যাচের সেরা। উয়েফার টেকনিক্যাল গ্রুপ বলেছে, “তিনি গোটা টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত ছিলেন। ফাইনালে গোল করেন, সেমিফাইনালে অ্যাসিস্ট।”
২২ বছরের এই ডিফেন্ডার বাঁ দিক দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে দৌড়েছেন, ইয়ামালকে আটকে দিয়ে নিচু কোনা দিয়ে প্রথম সমতা ফেরানো গোলটি করেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চারটি সফল ড্রিবল করেন, প্রতিপক্ষ বক্সে সবচেয়ে বেশি টাচ ছিল তারই, সাতটি ডুয়েল জেতেন এবং ফাইনাল থার্ডে সবচেয়ে বেশি (১৬টি) পাসও দেন। তিনি পাঁচটি ট্যাকল জেতেন, যেটাও পর্তুগালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কার্নি বলেন, “ওকে সামনে দৌড়াতে দেখা যায়, কিন্তু রক্ষণেও ওর দায়িত্ব অনেক। ও কমপ্লিট ডিফেন্ডার, দলে ওকে পাওয়া মানে সৌভাগ্য।” বালাগুয়ে বলেন, “মেন্ডেস দুর্দান্ত ছিলেন। এবার ব্যালন ডি’ওরের সেরা দশে ওর নাম আসতেই পারে। ইয়ামালের জন্য ও এখন দুঃস্বপ্ন।”