ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হতে চলেছে(Pralay Missile)। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘প্রলয়’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হতে চলেছে। সম্ভাব্য প্রথম ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছে আর্মেনিয়ার নাম, আর এই চুক্তি ঘিরে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
দেশীয় প্রযুক্তির ‘প্রলয়’—ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক(Pralay Missile)
‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্র(Pralay Missile) তৈরি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)। এটি একটি সারফেস-টু-সারফেস ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার পাল্লা ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। শত্রুপক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, গোলাবারুদের ডিপো, সামরিক ঘাঁটি বা যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগত স্থানসমূহে আঘাত হানতে এটি বিশেষভাবে সক্ষম।এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বিস্ফোরণ ক্ষমতা। এটি ৩৫০ থেকে ১০০০ কেজির শক্তিশালী বিস্ফোরক নিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারে, এবং নিশানায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানে। ‘প্রলয়’ মিসাইল ২০২২ সাল থেকে ভারতীয় সেনার অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত রয়েছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচিত।
রপ্তানির প্রথম ধাপেই আর্মেনিয়া(Pralay Missile)
সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই চুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণা হতে পারে(Pralay Missile)। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক মাসের আলোচনার পর বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে ঠিক কত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র আর্মেনিয়া কিনছে, সেই তথ্য দুই দেশই গোপন রেখেছে।ভারত ‘মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রিজ়িম (MTCR)’-এর সদস্য হওয়ায় প্রলয়ের ২৯০ কিমি পাল্লার সংস্করণ আর্মেনিয়াকে সরবরাহ করা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের লঙ্ঘন না ঘটে।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত(Pralay Missile)
আর্মেনিয়া বর্তমানে প্রতিবেশী আজারবাইজানের সঙ্গে গভীর সংঘাতপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে(Pralay Missile)। বিতর্কিত নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল ঘিরে ২০২০ সালের যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। আজারবাইজান তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ওই অঞ্চলটির বড় অংশ দখলে এনেছে। আর্মেনিয়ার দিক থেকে পাল্টা জবাবের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি দূরপাল্লার, নির্ভরযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা ভারতের ‘প্রলয়’ পূরণ করতে চলেছে।বিশ্লেষকদের মতে, প্রলয় হাতে এলে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু পর্যন্ত পৌঁছনো আর্মেনিয়ার জন্য সহজতর হবে, ফলে যুদ্ধ কৌশলে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এই অস্ত্র।

ভারতের রপ্তানি নীতি ও কূটনৈতিক কৌশল (Pralay Missile)
গত কয়েক বছর ধরে ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির দিকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শুধু নিজের আত্মনির্ভরতা বাড়ানো নয়, ভারতের লক্ষ্য এখন বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠা। ইতিমধ্যেই ফিলিপিন্সকে ব্রহ্মস সুপারসনিক মিসাইল, এবং আর্মেনিয়াকে পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার, আকাশ মিসাইল ও কামান রাডার সরবরাহ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি(Pralay Missile)
‘প্রলয়’ রপ্তানি সেই ধারারই একটি উচ্চতর ধাপ, যা ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে(Pralay Missile)। নয়াদিল্লি এমন কিছু দেশকে চিহ্নিত করেছে, যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় অস্ত্রে আগ্রহী। তাদের জন্য ভারত রফতানি-আমদানি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিচ্ছে—শর্ত একটাই, সেই অর্থে শুধু ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে হবে।এই প্রকল্পের আওতায় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশেও অস্ত্র রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বন্ধুত্বের বার্তা(Pralay Missile)
আর্মেনিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হল এই চুক্তির মাধ্যমে(Pralay Missile)। পাশাপাশি এটি তুরস্ক-আজারবাইজান জোটের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত বার্তাও বটে। দক্ষিণ ককেসাস অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বাড়াতে এই অস্ত্রচুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে ভারতের এমন পদক্ষেপ চীনের মতো দেশের চোখেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় অস্ত্রের উপস্থিতি ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ ডিফেন্স ভিশনের সাফল্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে।