ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বেঁচে থাকবেন, আশাই করেননি (Pahalgam Attack) অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য। চোখের সামনে তিনি পাশের পর্যটককে মরতে দেখেছেন। জঙ্গিকে আসতে দেখেই তিনি কলমা পড়তে শুরু করেছিলেন। তার ফলে তাঁকে গুলি করা হয়নি বলে মনে করছেন। জঙ্গি চলে যেতেই পরিবার নিয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন দেবাশিস। কলমা পাঠই বাঁচিয়ে দিল ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান দেবাশিসকে পহেলগাঁওয়ে জেহাদিদের হাত থেকে সপরিবারে রক্ষা পেয়েছেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য। দেবাশিস বলেছেন, ‘‘আমি যে এখনও বেঁচে আছি, সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না।’’
পাশে থাকা একজনকে গুলি করে (Pahalgam Attack)
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বৈসরন ভ্যালিতে গাছের তলায় বিশ্রাম করছিলেন তিনি। পরিবারও সঙ্গে ছিল। আচমকাই কানে আসে অনেকে জোরে জোরে কলমা পড়ছেন। তাতে তিনিও গলা মেলান। তখনই এক জলপাই রঙের সেনা উর্দি পরা এক জেহাদি তাঁর দিকে এগিয়ে এসে জানতে চায়, “কী করছ?” উত্তর না দিয়ে আরও জোরে কলমা পড়ছিলেন দেবাশিসবাবু (Pahalgam Attack)। তাঁকে আর কিছু না বলে এগিয়ে গিয়ে পাশে থাকা একজনকে গুলি করে সেই জঙ্গি বলে জানিয়েছেন তিনি।
‘সহজাত ভাবেই কলমা পড়তে শুরু করি’ (Pahalgam Attack)
অধ্যাপক বলছেন, ‘‘পাশের গাছের তলায় দাঁড়িয়ে অনেকে বিড়বিড় করে কলমা পড়ছিলেন। আমি তাঁদের দেখাদেখি সহজাত ভাবেই কলমা পড়তে শুরু করি (Pahalgam Attack)। কিছু ক্ষণের মধ্যে এক জঙ্গি আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমার পাশে যিনি ছিলেন, সরাসরি তাঁর মাথায় গুলি করে।’’ এর পর দেবাশিসের দিকে তাকায় সেই জঙ্গি। তাঁর কথায়, ‘‘সোজাসুজি আমার দিকে তাকিয়ে ও জিজ্ঞেস করল, ‘কী করছ?’ আমি তখন আরও জোরে জোরে কলমা পড়তে শুরু করে দিয়েছিলাম। আমি জানি না, কী ভেবে আমি এটা করলাম। এর পর ওই জঙ্গি মুখ ফিরিয়ে চলে গেল।’’
মুখ ঢাকা কয়েকটা লোক রাইফেল নিয়ে ছুটছে
দেবাশিসের কথায়, ‘গুলি চলার মতো শব্দ পেয়ে ট্যুর গাইডকে প্রশ্ন করি, কীসের শব্দ? উনি বলেন, পাশের জঙ্গল থেকে অনেক সময়ে বাঁদর বেরিয়ে এসে পর্যটকদের বিরক্ত করে। তখন বনবিভাগের লোকেরা এয়ারগান ছুড়ে তাড়ান, তারই শব্দ বোধহয়। কিন্তু ততক্ষণে আমার পিছনে দাঁড়ানো ছেলের চোখে পড়েছে, মুখ ঢাকা কয়েকটা লোক রাইফেল নিয়ে ছুটছে। তাদের ছোড়া গুলিতে দু’জনকে লুটিয়ে পড়তেও দেখে ছেলে। ওই আমাকে অ্যালার্ট করে। ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই স্ত্রী–ছেলের হাত ধরে দৌড় লাগাই।” তারপরেই নাকি ঘটে যায় এমন ঘটনা বলে দাবি করছেন দেবাশিস বাবু।
ঘোড়ার পিঠে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন
ঘোড়ার খুরের চিহ্ন দেখে ঘণ্টা দু’য়েক হেঁটে একটা পাহাড়ি গ্রামে পৌঁছন তিনি। দেবাশিসের কথায়, ‘পাহাড়ে উঠতে উঠতেও গুলির শব্দ কানে আসছিল। ওই গ্রামে পৌঁছনোর পর ফোনে টাওয়ার আসে। আমাদের ড্রাইভারকে ফোন করি। কোথায় আছি, আমার পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না। গ্রামের একটা বাড়ির দরজায় নক করে স্থানীয় মহিলাকে ফোনটা ধরিয়ে দিই, তিনি ড্রাইভারকে আমাদের লোকেশন বুঝিয়ে দেন। এর পর ড্রাইভারের কথামতোই একটা রাস্তা ধরে নেমে এসে সহিসদের দেখতে পাই, তাঁরাই ঘোড়ার পিঠে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন।