ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: একেবারে সাধারণ পোশাকে—টিশার্ট, জিন্স আর মুখে মাস্ক—কিন্তু গলায় রজনীগন্ধা (Purnam Kumar Shaw), গোলাপ ও গাঁদার দুটি মালা পরে। মুখে মাস্কের আড়ালে অনুভূত হতে থাকে তার আবেগের জোয়ার। হাওড়া স্টেশনে পূর্ণম সাউকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের উচ্ছ্বাস, সেই উত্তেজনার মাঝে যেন একটু বিব্রত তিনি। ভিড় সরিয়ে এক প্রৌঢ় এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, বাবার মতো এক স্নেহময় আলিঙ্গন। দুইজনের চোখে একসঙ্গে জলে ভাসল অনুভূতি।
চারপাশে দাঁড়িয়ে এক দল মানুষ (Purnam Kumar Shaw)
স্টেশন থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে ওঠেন পূর্ণম, তখনও তার চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল এক দল (Purnam Kumar Shaw) মানুষ। উঠল ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি। সকলকে নমস্কার করে, উপলব্ধি করেন নিজের নিরাপদে ফিরে আসার বার্তা। গাড়ি ছুটে চলে হুগলির রিষড়া বাগখাল এলাকার দিকে, যেখানে আয়োজন করা হয়েছিল তাঁর জন্য।
‘ওয়েলকাম’ লেখা গেট সাজানো (Purnam Kumar Shaw)
বাগখালে বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউকে স্বাগত জানাতে ‘ওয়েলকাম’ লেখা গেট সাজানো (Purnam Kumar Shaw) হয়েছিল। এলাকার প্রিয় মুখকে ফিরিয়ে আনার জন্য এক বিশাল আয়োজন। হুডখোলা গাড়ি সাজানো হয়েছিল যাতে করে তাঁকে র্যালি করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সারা রাস্তাটা মুখর ছিল ব্যান্ড পার্টির সুরে। বাগখালের বাসভবন ‘সাউ সদন’ আলো দিয়ে আলোকিত। বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা আনন্দে মাতোয়ারা। রান্নাঘরে রাঁধুনি ব্যস্ত ছিলেন বিশেষ খাদ্য রান্নায়—আজকের খাবার হবে সম্পূর্ণ নিরামিষ, কারণ ওই দিন ছিল একাদশী। তবে পূর্ণমের প্রিয় লুচি-তরকারি, দই-মিষ্টি থাকত অবশ্যই। অনুষ্ঠানে কেক কাটা হয়েছে পূর্ণমের জন্য।
সীমান্ত পরিস্থিতি অতি সংবেদনশীল
পশ্চিম পাঞ্জাবে পঠানকোটের কাছে কর্মরত অবস্থায় এক ভুল সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের মাটিতে প্রবেশ করেন পূর্ণম। সেখানে পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করে, যেখানে সীমান্ত পরিস্থিতি অতি সংবেদনশীল। এই ধরনের ঘটনায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে ফেরত দেয়নি। অবশেষে গত বুধবার পাক সেনা পূর্ণমকে মুক্তি দেয় এবং তিনি অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ফিরে আসেন।

বাড়ি ফিরে আসার অনুমতি
দেশে ফিরে আসার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি কাজ শেষ করে অবশেষে বাড়ি ফিরে আসার অনুমতি পান পূর্ণম। বাড়িতে পৌঁছে পূর্ণম বলেন, “আপনাদের সকলের আশীর্বাদে যেন দ্বিতীয় জন্ম পেলাম। পরিবারের সবার সঙ্গে আবার দেখা হলো।” পূর্ণমের স্ত্রী জানিয়েছেন, এতদিন পরে স্বামীকে বাড়িতে পেয়ে ভালো লাগছে। তবে ফোন যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারেননি। দাস দিন আগে তারা জানতে পারেন পূর্ণম ভারতে ফিরে এসেছে। বাড়িতে ফিরে তাঁর প্রিয় খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল।
এই স্বাগত অনুষ্ঠান ও আবেগঘন পরিবেশ পুরোটাই বোঝায় একজন সৈন্যের কঠোর পরিশ্রম আর সীমান্তরক্ষার ত্যাগের কথা। এক দীর্ঘ, বেদনার্ত অধ্যায়ের পর মুক্তি পাওয়া পূর্ণমের গল্প আজ দেশবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।