ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এই ঘটনা কোয়ান্টাম সাইবার নিরাপত্তা, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক এবং ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে (Quantum Secure Communication)। ভারত নিরাপদ যোগাযোগের এক নতুন কোয়ান্টাম যুগে প্রবেশ করেছে যা ভবিষ্যতের যুদ্ধে একটি গেম চেঞ্জার হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে কোয়ান্টাম এনট্যাংগেলমেন্টের মাধ্যমে নিরাপদ যোগাযোগের সফল পরীক্ষা (Quantum Secure Communication)
ভারত কোয়ান্টাম প্রযুক্তির এক নতুন যুগে প্রবেশ করল (Quantum Secure Communication)। আইআইটি দিল্লির DRDO-Industry-Academia Centre of Excellence (DIA-CoE)-এর মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষামূলক সাফল্যের মধ্য দিয়ে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আইআইটি দিল্লি ক্যাম্পাসেই এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে কোয়ান্টাম এনট্যাংগেলমেন্ট ব্যবহার করে ফ্রি-স্পেস কোয়ান্টাম সিকিউর কমিউনিকেশনের সফল প্রয়োগ করা হয়েছে।
এই পরীক্ষায় প্রায় ২৪০ বিট প্রতি সেকেন্ড সিকিয়োর কী রেট পাওয়া গেছে এবং কোয়ান্টাম বিট ত্রুটির হার ছিল ৭ শতাংশের নিচে। এই সাফল্য ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম সাইবার সিকিউরিটি, দীর্ঘ দূরত্বে কোয়ান্টাম কি ডিস্ট্রিবিউশন (QKD), কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ও কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের জন্য বড় পথপ্রদর্শক হতে চলেছে। এই উদ্যোগ ভারতের কোয়ান্টাম প্রযুক্তি উন্নয়নের বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গেও যুক্ত।
DRDO ও আইআইটি দিল্লির যৌথ উদ্যোগে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নয়ন (Quantum Secure Communication)
‘ফ্রি-স্পেস QKD-র জন্য ফোটোনিক প্রযুক্তির ডিজাইন ও উন্নয়ন’ নামক DRDO-র Futuristic Technology Management (DFTM) বিভাগের অনুমোদিত একটি প্রকল্পের অধীনে এই প্রদর্শন করা হয় (Quantum Secure Communication)। আইআইটি দিল্লির অধ্যাপক ভাস্কর কানেরির গবেষক দলের নেতৃত্বে এই কাজটি সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন DRDO-র একাধিক শীর্ষ আধিকারিক, আইআইটি দিল্লির গবেষণা বিভাগীয় ডিন, এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: Mumbai: টানা বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড মুম্বই! মহারাষ্ট্রে জারি কমলা সতর্কতা
এনট্যাংগেলমেন্ট-ভিত্তিক নিরাপদ যোগাযোগের বিশেষত্ব
এনট্যাংগেলমেন্ট-ভিত্তিক QKD পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। ডিভাইসগুলো ত্রুটিপূর্ণ হলেও এই পদ্ধতিতে কী ট্রান্সমিশন নিরাপদ থাকে। কারণ, যদি কেউ এনট্যাংগেল্ড ফোটনের মেজার করতে চায়, তাহলে তার কোয়ান্টাম স্টেট বিঘ্নিত হয়, এবং মূল ব্যবহারকারী তা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন।
এই প্রযুক্তি মূলত এমন এক ধরনের এনক্রিপশন দেয়, যা ভাঙা প্রায় অসম্ভব। এর ব্যবহার প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, টেলিকমের মতো কৌশলগত ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রি-স্পেস QKD-র ফলে আলাদা করে অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর প্রয়োজন হয় না, ফলে দুর্গম বা ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটি আরও কার্যকর।
আগের সাফল্য এবং ভবিষ্যতের দিশা
এর আগেও ২০২২ সালে DRDO এবং অধ্যাপক ভাস্করের দল বিন্ধ্যাচল ও প্রয়াগরাজের মধ্যে প্রথম ইন্টারসিটি কোয়ান্টাম যোগাযোগ লিংক তৈরি করেছিল, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ কমার্শিয়াল ডার্ক ফাইবার। ২০২৪ সালে তারা আরও এক DRDO প্রকল্পে ১০০ কিমি দীর্ঘ টেলিকম গ্রেড অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে এনট্যাংগেলমেন্ট-সহ কোয়ান্টাম কি বিতরণে সফল হয়।
এই সমস্ত উন্নয়ন DRDO-এর ১৫টি Centre of Excellence-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলি IIT, IISc এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও শুভেচ্ছা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য DRDO এবং IIT দিল্লিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিরাপদ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি ভারতের কোয়ান্টাম যুগে প্রবেশ – যা ভবিষ্যতের যুদ্ধে বড় পরিবর্তন আনবে।” প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সচিব এবং DRDO-র চেয়ারম্যান ডঃ সমীর ভি কামাত এবং IIT দিল্লির ডিরেক্টর অধ্যাপক রঙ্গন ব্যানার্জিও এই সাফল্যের জন্য গোটা দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।