ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: যুদ্ধের ধরন বদলাচ্ছে, ভারতকেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকতে হবে (Defence Technology Advancement)। “প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে প্রচলিত যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। এখন যুদ্ধ অনেক বেশি অনিয়মিত হয়ে উঠেছে। তাই, ভারতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বদা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে,” বলেছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ। বেঙ্গালুরুতে DRDO সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি DRDO, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSMEs), স্টার্টআপ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশংসা করেন, যারা প্রতিরক্ষা উৎপাদনে দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতকে ‘বিকশিত ভারত’ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও উদ্ভাবন ও উন্নয়ন আনতে হবে, যাতে দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া, মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ থিমে DRDO-শিল্প সংযোগ সেমিনার (Defence Technology Advancement)
১৫তম এয়ারো ইন্ডিয়া-র অংশ হিসেবে ‘DRDO-Industry Synergy towards Viksit Bharat: Make in India, Make for the World’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় (Defence Technology Advancement)। এই অনুষ্ঠানে ১৬টি DRDO ল্যাবরেটরির ১৯টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য মোট ৩৫টি ‘লাইসেন্সিং এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্সফার অফ টেকনোলজি’ (LATOT) স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং দেশ ও বিদেশের সম্ভাব্য গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়।
প্রযুক্তি হস্তান্তরের নীতি আরও সহজ করল DRDO (Defence Technology Advancement)
সেমিনারে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী DRDO-র ‘ট্রান্সফার অফ টেকনোলজি (ToT)’ নীতি প্রকাশ করেন (Defence Technology Advancement)। এই নতুন নীতির ফলে প্রতিরক্ষা উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে DRDO-র সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য হবে। এর পাশাপাশি, MSMEs এবং স্টার্টআপ সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিরক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবসা করার প্রক্রিয়াও আরও সহজ হবে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রচার (Defence Technology Advancement)
এই সেমিনারে ‘DRDO Products for Export’ নামক একটি সংকলন প্রকাশ করা হয় (Defence Technology Advancement), যেখানে ২০০-র বেশি প্রতিরক্ষা পণ্য ও সিস্টেমের বিবরণ রয়েছে। এই সংকলনটি ভারতের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সম্পর্কে বন্ধু দেশগুলোর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং প্রতিরক্ষা রপ্তানিকে উৎসাহিত করবে।
সামরিক বিমান চলাচলের নতুন নীতিমালা প্রকাশ
এই সেমিনারে ‘এয়ারওয়ার্থিনেস পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক – IMAP-23’ প্রকাশ করা হয়। এই নতুন নীতির মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা বিমান খাতের সার্টিফিকেশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে দেশীয় শিল্পের উদীয়মান প্রয়োজনীয়তাগুলো আরও ভালোভাবে সংযোজিত হয়।
আরও পড়ুন: India Air Force Seminar at Aero India: আত্মনির্ভর ভারতের পথে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন
এর পাশাপাশি, ‘এয়ারওয়ার্থিনেস সার্টিফিকেশন কিট’ চালু করা হয়, যা বিভিন্ন নীতিমালা ও টেমপ্লেটের একটি সংকলন। এটি প্রতিরক্ষা শিল্পগুলোর জন্য সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া আরও সহজ করে তুলবে।
প্রতিরক্ষা খাতে ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
এই সেমিনারে সেন্টার ফর মিলিটারি এয়ারওয়ার্থিনেস অ্যান্ড সার্টিফিকেশন (CEMILAC), ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি (DIAT) এবং অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা খাতের ইঞ্জিনিয়ারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যাতে তারা সার্টিফিকেশন সংক্রান্ত কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন।
বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা রপ্তানির সুযোগ নিয়ে আলোচনা
সেমিনারে দেশ-বিদেশের প্রতিরক্ষা সংস্থা, সরকারি সংস্থা এবং বিভিন্ন বন্ধু দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে ভারত থেকে প্রতিরক্ষা পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দেন। এর পাশাপাশি, ‘প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুযোগ’ বিষয়ক একটি প্যানেল আলোচনা হয়, যেখানে প্রতিরক্ষা খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
MSME ও স্টার্টআপদের উৎসাহ
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের যুগে ভারতকে প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভর হতে হবে এবং দেশীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে হবে। তিনি MSME ও স্টার্টআপদের উৎসাহ দেন, যাতে তারা প্রতিরক্ষা উৎপাদনে আরও বেশি ভূমিকা নিতে পারে এবং ভারতকে একটি প্রতিরক্ষা রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে সাহায্য করে। এই সেমিনারের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় হলো, যা ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে।