ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতায় লজিস্টিক ব্যবস্থাকে কৌশলগত শক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Rajnath Singh on Operation Sindoor)। রাজনাথ সিংহ বলেন, “যুদ্ধ, দুর্যোগ বা বিশ্বব্যাপী মহামারী যাই হোক না কেন, যে দেশ তার সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী রাখে, সেই দেশই সবচেয়ে স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং সক্ষম”
যুদ্ধ জেতা এখন আর শুধু বন্দুক-গুলিতে নয় (Rajnath Singh on Operation Sindoor)
২০২৫ সালের ২৭ জুলাই, গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ভাদোদরা)-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh on Operation Sindoor)। তিনি বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর গতিশীল মোতায়েন থেকে নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক জায়গায় উপকরণ পৌঁছে দেওয়া — এই পুরো প্রক্রিয়াটিই অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে নির্ধারক ভূমিকা নিয়েছে।” তাঁর মতে, আজকের যুগে শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, সময়ানুবর্তিতায় সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনাও যুদ্ধজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লজিস্টিকস কেবল সামগ্রী সরবরাহ নয়, একটি কৌশলগত শক্তি (Rajnath Singh on Operation Sindoor)
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, লজিস্টিক ব্যবস্থাকে শুধুই পণ্য পরিবহণের দৃষ্টিতে নয়, একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে (Rajnath Singh on Operation Sindoor)। তিনি বলেন, সীমান্তে লড়াই করা সৈনিক হোন বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মী — সমন্বয় এবং সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া, শ্রেষ্ঠতম উদ্দেশ্যও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর কথায়, “লজিস্টিকস সেই শক্তি যা বিশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণে রূপান্তর করে। অস্ত্রের থেকেও শক্তির মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায় সময়মতো সম্পদের ব্যবস্থাপনা।” যুদ্ধ, দুর্যোগ বা মহামারি—যে দেশ তার লজিস্টিক শৃঙ্খলকে দৃঢ় রাখে, সে দেশই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও সক্ষম।
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে লজিস্টিকসের অবদান (Rajnath Singh on Operation Sindoor)
রাজনাথ সিং বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে লজিস্টিকস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ (Rajnath Singh on Operation Sindoor)। উৎপাদনের পূর্বধাপ থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পর্যন্ত পৌঁছনোর প্রতিটি ধাপে লজিস্টিক ব্যবস্থাই সংযোগ ঘটায়। তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ ভ্যাকসিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং চিকিৎসকের দল সময়মতো এক স্থান থেকে অন্যত্র পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল এই ব্যবস্থার জন্যই। এর মাধ্যমে ভারতের জিডিপিতেও সরাসরি ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে লজিস্টিকস।
গত ১১ বছরে পরিকাঠামোর বিপুল উন্নয়ন
গত ১১ বছরে ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, এই পরিবর্তনের ভিত্তি গড়ে তোলা হয়েছে নীতিগত সংস্কার ও মিশন মোড প্রকল্পের মাধ্যমে। শুধু শারীরিক যোগাযোগই নয়, এর প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, লজিস্টিক খরচ হ্রাস এবং পরিষেবা সরবরাহের মান উন্নতিতেও।
পিএম গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যান ও ভবিষ্যত পরিকাঠামো
রাজনাথ সিং জানান, পিএম গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় রেল, সড়ক, বন্দর, জলপথ, বিমানবন্দর, গণপরিবহণ এবং লজিস্টিক পরিকাঠামো — এই সাতটি স্তম্ভ একত্রে ভারতের অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলছে। তাঁর কথায়, “পিএম গতিশক্তি কেবলমাত্র একটি প্রকল্প নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি — যার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য-ভিত্তিক পরিকল্পনার সাহায্যে ভবিষ্যতমুখী পরিকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে।”
জাতীয় লজিস্টিক নীতি ও ভবিষ্যত লক্ষ্য
জাতীয় লজিস্টিক নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নীতি একটি সমন্বিত, দক্ষ এবং কম খরচের লজিস্টিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এর ফলে শুধু খরচ কমবে না, তথ্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্কৃতিও গড়ে উঠবে। বর্তমানে ভারতের লজিস্টিক খরচ জিডিপির ১৩-১৪ শতাংশ। এই খরচ উন্নত দেশের স্তরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এই নীতি কাজ করছে। এতে ভারতের পণ্যের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে।
আরও পড়ুন: OBC Certificate: সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি রাজ্য সরকারের, ওবিসি মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে অন্ত
গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা
গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সমাজ যে ‘গতি’ নিয়ে দেশকে ‘শক্তি’ দিচ্ছে, তা প্রশংসনীয়। তাঁর মতে, “লজিস্টিক শিক্ষায় দেশের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ভাবনা, একটি মিশন। এটি ভারতের দ্রুত, সংগঠিত ও সমন্বিত অগ্রগতির জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতে সাহায্য করছে।”
তিনি বলেন, ডিজিটাইজেশন, অটোমেশন, রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর পূর্বাভাস এবং টেকসই পরিবহণ ব্যবস্থা — এই সমস্ত বিষয়ে কাজ করা আজকের সময়ে ভারতের জন্য জাতীয় প্রয়োজনীয়তা। এসব ক্ষেত্রে গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়।
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বার্তা
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “তোমরা শুধু চাকরির জন্য নয়, সমস্যার সমাধানকারী হয়ে উঠো।” তাঁর মতে, “ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে, আমাদের প্রয়োজন স্মার্ট লজিস্টিক ব্যবস্থা। যতক্ষণ না পণ্য, পরিষেবা ও মানুষ দ্রুত ও সহজে চলাচল করতে পারে, ততদিন কোনও দেশ উন্নত দেশ হয়ে উঠতে পারে না।”
গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে
২০২২ সালে রেল মন্ত্রকের অধীনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় লজিস্টিক ও পরিবহণ খাতে বিশ্বমানের দক্ষতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। রেলমন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরোদা সাংসদ ড. হেমাং জোশী এবং উপাচার্য প্রফেসর (ড.) মনোজ চৌধুরী।