ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নয়াদিল্লিতে ১ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ স্তরের কমান্ডার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে (Army Commanders Conference)। এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সীমান্ত ও দেশের অভ্যন্তরের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, সংগঠনের পুনর্গঠন, রসদ ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকীকরণ এবং বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।
সম্মেলনের তৃতীয় দিনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে ভাষণ দেন। তার ভাষণের আগে “সংস্কারের বছর” বিষয়ক একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি দেশের আস্থা (Army Commanders Conference)
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য ও অনুপ্রেরণাদায়ী সংস্থা (Army Commanders Conference)। তিনি সেনাবাহিনীর সীমান্ত রক্ষা, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই এবং জরুরি সময়ে প্রশাসনকে সহায়তার ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “নিরাপত্তা, দুর্যোগ মোকাবিলা, চিকিৎসা সহায়তা থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা—সব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী সক্রিয়। দেশ গঠনে ও দেশের উন্নয়নে ভারতীয় সেনার ভূমিকা অতুলনীয়।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেনা কমান্ডারদের ধন্যবাদ জানান, যারা দেশকে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: UPI Down: করা যাচ্ছে না পেমেন্ট, সারা দেশে ডাউন UPI!
বিশ্ব পরিস্থিতি ও আধুনিক যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ (Army Commanders Conference)
রাজনাথ সিং বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির এবং তা গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করছে (Army Commanders Conference)। তিনি বলেন, “আধুনিক যুদ্ধ শুধুমাত্র প্রচলিত যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সাইবার, তথ্য যুদ্ধ, যোগাযোগ, বাণিজ্য ও আর্থিক ক্ষেত্র যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তাই সেনাবাহিনীকে কৌশল নির্ধারণের সময় এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বিশ্ব পরিস্থিতির পরিবর্তন মাথায় রেখে সেনাবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে সামরিক গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে।
উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তের পরিস্থিতি (Army Commanders Conference)
উত্তর সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেনাদের উপর সম্পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন (Army Commanders Conference)। তিনি বলেন, সেনারা সাহসের সঙ্গে সীমান্ত রক্ষা করছে এবং এই সজাগ অবস্থান বজায় রাখতে হবে। তিনি বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের (BRO) প্রশংসা করেন, যারা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পশ্চিম ও উত্তর সীমান্তে রাস্তা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

পশ্চিম সীমান্তের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী সফলভাবে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছে। তবে শত্রুপক্ষের প্ররোচিত প্রক্সি যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “সিআরপি এফ, পুলিশ বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সমন্বিত অভিযানের ফলে জম্মু-কাশ্মীরে স্থিতিশীলতা বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”
সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ ও আত্মনির্ভরতা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সেনাবাহিনী ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ‘আত্মনির্ভর ভারত’ লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংযোগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: SC final verdict: আলাদা হল না যোগ্য-অযোগ্য! ‘সুপ্রিম’ রায়ে বাতিল প্রায় ২৬ হাজার চাকরি
তিনি জানান, সেনা কমান্ডার সম্মেলনে নীতি আয়োগের সঙ্গে “বিকশিত ভারত” গঠনের বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।
সেনা পরিবার ও শহিদদের প্রতি সম্মান
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “সরকার শহিদদের পরিবারের পাশে সবসময় আছে। তাদের কল্যাণের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তিনি সেনাবাহিনীর গৌরবময় অবদান স্মরণ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সামরিক কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি প্রতিরক্ষা সংযুক্তিদের (Defence Attaches) ভূমিকা পুনর্নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দেন, যাতে তারা দেশের নিরাপত্তা স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সমাপ্তি বক্তব্যে তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষা কূটনীতি, দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশ, তথ্য যুদ্ধ, প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ নিয়ে এই ধরনের সম্মেলনে নিয়মিত আলোচনা হওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে সামরিক কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকে। কমান্ডারদের এই সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।” তিনি শেষ করেন এই বলে যে, “দেশ তার সেনাবাহিনীর জন্য গর্বিত। সরকার সবসময় সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ ও সংস্কারের পথে তাদের পাশে থাকবে।”