ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আজ, ২৬ জুন আষাঢ় মাসের (Rathayatra and Ambubachi) ঘোর বর্ষায় ভারতবর্ষের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান দু’টি ভিন্ন আচার পালন করছে, অথচ গভীরের সুর এক। উত্তর-পূর্ব ভারতের কামরূপে চলছে অম্বুবাচির শেষ দিন, আর দক্ষিণ-পূর্বের ওড়িশা জুড়ে এখন শ্রীজগন্নাথদেবের অনাবসর পর্ব। দুটি ঘটনাই মনে করিয়ে দেয় সৃষ্টির আগে দরকার এক নিঃশব্দ, গঠনমূলক বিরতি।
রজঃচক্র নিষিদ্ধ নয়, বরং সৃষ্টির উৎস (Rathayatra and Ambubachi)
কামাখ্যা মন্দিরে অম্বুবাচি শুরু হয়েছিল তিন (Rathayatra and Ambubachi) দিন আগে। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময়ে দেবী রজঃস্বলা হন, তাই মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। কোনও পূজা নয়, কোনও দর্শন নয়। কিন্তু এই ‘অভিযান’ আসলে নারীশরীরের প্রাকৃতিক চক্রকে সম্মান জানানোর আচার। এই রজঃচক্র এখানে নিষিদ্ধ নয়, বরং সৃষ্টির উৎস হিসেবে পূজনীয়। রক্তের যে রূপকে সমাজ বহু যুগ ধরে লজ্জা হিসেবে দেখেছে, অম্বুবাচিতে সেই রক্তই হয়ে ওঠে জীবনের প্রতীক। তিন দিনের বিরতি শেষে আজ ফের খোলা হচ্ছে কামাখ্যার দরজা যেন নবজন্মের বার্তা নিয়ে।
শ্রীজগন্নাথদেবের ‘অনাবসর’ (Rathayatra and Ambubachi)
অন্যদিকে, পুরীর শ্রীজগন্নাথদেবের ‘অনাবসর’ চলছে গত সপ্তাহ (Rathayatra and Ambubachi) থেকে। স্নানযাত্রার দিন ১০৮টি পবিত্র কলস দিয়ে স্নানের পর তিনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। বিশ্বাস, এই অসুস্থতা ঈশ্বরের মানবরূপের প্রকাশ। তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়, রাখা হয় নির্জনতায়। এই সময় মন্দিরে দর্শন বন্ধ, পূজাও সীমিত। এটি তাঁর আত্মচর্চার সময়, নিজেকে প্রস্তুত করার সময় কারণ সামনে রয়েছে বৃহৎ রথযাত্রা। রথের দোলায় গোটা পৃথিবী যখন ভক্তিতে আন্দোলিত হবে, তার আগে দেবতাও নিজে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
দুটি আচার একে অপরের পরিপূরক
অম্বুবাচি এবং অনাবসর একটির কেন্দ্রে দেবী, অন্যটির কেন্দ্রে দেবতা। একজন রক্তচক্রে নিজের শরীর দিয়ে সৃষ্টি করছেন, অন্যজন স্তব্ধ হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছেন সেই সৃষ্টিকে ধারণ করার জন্য। নারী ও পুরুষ, শক্তি ও স্থিতি এই দুটি আচার একে অপরের পরিপূরক।

বিশ্রাম মানে প্রস্তুতি
এই দুই আচার আজকের সমাজকে বড় বার্তা দেয়। যেখানে আমরা বিশ্রামকে সময়ের অপচয় বলে ভাবি, সেখানে কামাখ্যা ও জগন্নাথ শেখাচ্ছেন বিশ্রাম মানে প্রস্তুতি। সৃষ্টির আগে দরকার আত্মদৃষ্টি, ক্লান্তি স্বীকার করার সাহস। আর তাই, এই আষাঢ় মাস শুধু তীর্থযাত্রার সময় নয়, আত্মদর্শনেরও উপলক্ষ।
আরও পড়ুন: Shubhanshu Shuklas Message: ২৪ ঘণ্টা পার, মহাকাশ থেকে কী বললেন শুভাংশু?
আজ, যখন কামাখ্যার দরজা খুলছে এবং জগন্নাথের অন্তরালবাস চলছে, তখন সৃষ্টির এই দুই মুখ নারী ও পুরুষ দুজনেই আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, থেমে যাওয়া মানে পিছিয়ে যাওয়া নয়, বরং নতুন শুরুর প্রস্তুতি।