ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: “ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন হে”। সত্যিই যাদের (Republic Day History) চোখে স্বদেশ ছিল স্বপ্ন, যারা কর্তৃত্ববাদকে দূরে সরিয়ে দেশে জনগণের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছিল প্রজাতন্ত্র বা গণতন্ত্র দিবসের দিন।
প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day History)
প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি ভারতবর্ষে পালিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day History), যা ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত। এই দিনটি ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার দিন, এবং এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান দেশের আইনি ভিত্তি হিসেবে কার্যকর হয় এবং ভারত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সংবিধান প্রণয়নের প্রেক্ষাপট (Republic Day History)
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর, দেশ যখন ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে, তখনই নতুন রাষ্ট্রের (Republic Day History)জন্য একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়ে। ভারতের স্বাধীনতার পর দ্রুত একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। কারণ স্বাধীনতার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। সে পথে লেগেছিল লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত।
আরও পড়ুন: Vastu Tips 2: প্রতি সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির এই জায়গাগুলোতে প্রদীপ দিলে খুশি হবেন মা লক্ষ্মী
দেশের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে ও শৃঙ্খলায় (Republic Day History) বেঁধে রাখতে ১৯৪৬ সালে ভারতীয় সংবিধান পরিষদ গঠন করা হয়। সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডাঃ ভীমরাও আম্বেদকর, যিনি ছিলেন সংবিধান পরিষদের চেয়ারম্যান। দীর্ঘ আলোচনা ও বিশ্লেষণের পর ১৯৪৯ সালে সংবিধানটি চূড়ান্ত রূপ পায় এবং তা ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য (Republic Day History)
প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day History) শুধুমাত্র একটি আইনি প্রক্রিয়া পূর্ণ হওয়ার দিন নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং জাতীয় ঐক্যের উদযাপনও। এই দিনটি প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের কাছে এক মহান গর্বের বিষয়। এই দিনটি ভারতের সাংবিধানিক মর্যাদা ও শক্তিকে চিহ্নিত করে, যেখানে জনগণের স্বাধীনতা, সমতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
দিল্লিতে কুচকাওয়াজ
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ভারতের রাজধানী দিল্লির রাজপথে এক বিশাল কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সামরিক শক্তি এবং প্রশাসনিক দক্ষতার প্রদর্শনী। এই কুচকাওয়াজে অংশ নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বায়ুসেনা এবং অন্যান্য আধিকারিক বাহিনী। কুচকাওয়াজে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং রাষ্ট্রপতির অভিবাদন গ্রহণ করা হয়।

এছাড়া, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যও তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করতে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, সঙ্গীত এবং নৃত্য প্রদর্শন করে, যা দেশের বৈচিত্র্য ও ঐক্যকে তুলে ধরে। এছাড়া কৃতীদের বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারের জন্য সম্মানিত করা হয়, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মাননা
প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতী ব্যক্তিদের সম্মানিত করেন। এদিন “ভারত রত্ন”, “পদ্ম পুরস্কার” এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অসাধারণ অবদানের জন্য দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব
প্রজাতন্ত্র দিবস শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একটি বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই দিনে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত থাকেন। তারা ভারতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
প্রজাতন্ত্র দিবস ভারতীয় জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং শ্রদ্ধাবোধের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে একটি নতুন আশার সঞ্চার হয়, যেখানে তারা তাদের অধিকার এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়। প্রজাতন্ত্র দিবস ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ, যা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্বের বিষয়।