ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করলো শিয়ালদহ আদালত(RG Kar Case Verdict)। ১৬২ দিন পর তিলোত্তমা পেল বিচার। শনিবার বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে বহু প্রতীক্ষিত এই মামলার রায়দান হল অবশেষে। এদিন সঞ্জয়কে কাঠগড়ায় তুলে বিচারক জানিয়ে দেন, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিচারকের কথা শুনে চিৎকার করে ওঠে সঞ্জয়। বিচারক জানিয়ে দেন, সোমবার এই মামলার সাজা ঘোষণা।
“দোষ করলে গলার রুদ্রাক্ষের মালা খুলে পড়ে যেত” (RG Kar Case Verdict)
শিয়ালদহ আদালত ভবনের তিনতলার ২১০ নম্বর কক্ষে শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাস বসে। সঞ্জয়কে এজলাসে দোষী সাব্যস্ত করা হয়(RG Kar Case Verdict)। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের জন্য মৃত্যু), ১০৩(১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে। বিচারকের কথা শুনে সঞ্জয় চিৎকার করে ওঠে। সে দাবি করে, “আমি কিছু করিনি। যারা করেছে তাদের কেন ছাড়া হল? আমার কোনও দোষ নেই। সবাই মিলে করেছে। আমি পাপ করিনি। দোষ করলে গলার রুদ্রাক্ষের মালা খুলে পড়ে যেত।” সঞ্জয় হাত জোড় করে ‘স্যর’ ‘স্যর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন বারবার। তিনি বলেন, ‘‘আপনি তো দোষী সাব্যস্ত করে দিলেন। আমি গরিব। আমি এই কাজ করিনি। যারা করেছে, তাদের কেন ছাড়া হচ্ছে?’’ এর পর আদালত থেকে একপ্রকার জোর করেই বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে।
৯ আগস্ট থেকে ১৮ জানুয়ারি (RG Kar Case Verdict)
গত বছরের ৯ আগস্ট, আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয় তাঁকে। তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ আগস্ট এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৭ অক্টোবর মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম উল্লেখ করে সিবিআই চার্জশিট পেশ করে আদালতে। ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক হয়।গত ৪ নভেম্বর সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত(RG Kar Case Verdict)। ফাঁসি নাকি যাবজ্জীবন, কী সাজা হয় সঞ্জয়ের সেদিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য।
আরও পড়ুন:North Dinajpur News : গুলির জবাবে গুলি ! নিহত গোয়ালপোখর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সাজ্জাক
কী বললেন নির্যাতিতার পরিবার?
নির্যাতিতার পরিবারের ৫ সদস্য আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তবে সাধারণ মানুষকে আদালত কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেয়ের নৃশংস হত্যার ১৬২ দিনের মাথায় সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিচারককে ধন্যবাদ জানান তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। বিচারকের রায় শুনে কেঁদে ফেলেন নির্যাতিতার বাবা এবং মা(RG Kar Case Verdict)। তাঁরা বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার উপর যে আস্থা আমরা রেখেছিলাম, তার পূর্ণমর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’’ বিচারক জানান, সোমবার তাঁদের কথা শোনা হবে। যদিও সিভিক ভলান্টিয়ারই একমাত্র অভিযুক্ত এই তথ্য মানতে এখনও নারাজ নির্যাতিতার বাবা-মা।
আরও পড়ুন:Aadhaar Card: আধার কার্ডে সমস্যা, পড়ুয়াকে ‘বাংলাদেশি তকমা’ প্রধান শিক্ষকের
কী সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের?
সঞ্জয় পরে আদালতে একাধিক বার দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আদালত চত্বরে প্রিজ়ন ভ্যান থেকেও চিৎকার করে এই দাবি করেছিলেন সঞ্জয়। শনিবার রায় ঘোষণার পরেও একই কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। বিচারক জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ ১০ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। খুনের ঘটনায় ২৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যে ভাবে সঞ্জয় গলা টিপে হত্যা করেছেন, তাতে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে জানা যায়।