ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কানাডার লিবারাল পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা রুবি ঢাল্লা (Ruby Dhalla) সম্প্রতি একটি সাহসী ঘোষণা করে সংবাদের শিরোনামে এসেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হলে অবৈধ অভিবাসীদের কানাডা থেকে বিতাড়িত করবেন। লিবারাল পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে জাস্টিন ট্রুডোকে প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে থাকা ঢাল্লার এই পরিকল্পনা অভিবাসন ইস্যুকে তার প্রচারের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এই প্রতিশ্রুতি সমর্থন ও বিতর্ক দু’ই সৃষ্টি করেছে।
লিবারাল পার্টির নেতৃত্বের জন্য ঢাল্লার প্রার্থীপদ ঘোষণা (Ruby Dhalla)
২২ জানুয়ারি রুবি ঢাল্লা (Ruby Dhalla) আনুষ্ঠানিকভাবে জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য লিবারাল পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে যোগ দেন। যদি তার দল পরবর্তী ফেডারাল নির্বাচনে জয়ী হয়, তবে তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবেন।
রুবি ঢাল্লা কে? (Ruby Dhalla)
রুবি ঢাল্লা (Ruby Dhalla), ম্যানিটোবার উইনিপেগ শহরে পাঞ্জাবি অভিবাসীদের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজের জীবনের পথচলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন। তিনি একজন সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী, অভিনেত্রী এবং উদ্যোক্তা। নিজের সম্পর্কে ঢাল্লা (Ruby Dhalla) বলেন, তিনি একজন “স্বনির্মিত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা” এবং লিবারাল পার্টি ও কানাডার প্রতি গভীরভাবে নিবেদিত।
শিক্ষাজীবন
রুবি ঢাল্লা (Ruby Dhalla) ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা শুরু করেন। পরে ইউনিভার্সিটি অফ উইনিপেগ থেকে ১৯৯৫ সালে বায়োকেমিস্ট্রিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন, যেখানে তিনি পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাইনর করেছিলেন। ওই বছরই তিনি ম্যানিটোবা থেকে রোডস স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি টরন্টোর কানাডিয়ান মেমোরিয়াল কাইরোপ্রাকটিক কলেজ থেকে কাইরোপ্রাকটিকের ডিগ্রি অর্জন করেন।
গ্ল্যামার জগতের যাত্রা
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে ঢাল্লা একজন কাইরোপ্রাকটর হিসেবে কাজ করেছেন এবং অভিনয়ে মনোনিবেশ করেছিলেন। বলিউড-অনুপ্রাণিত ছবি “কিউ? কিস লিয়ে?”-তে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এছাড়া, ১৯৯৩ সালে মিস ইন্ডিয়া-কানাডা প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হন।
রাজনৈতিক জীবন
২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্র্যাম্পটন-স্প্রিংডেল সংসদীয় আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাল্লা। তিনি পরপর তিনটি মেয়াদে কানাডার পার্লামেন্টে নির্বাচিত প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এখন তিনি আবার ইতিহাস রচনার আশায় রয়েছেন। এইবার কানাডার প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে তার ঘোষণা
ঢাল্লা সম্প্রতি X (পূর্বে টুইটার)-এ একটি ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, “আপনাদের ধন্যবাদ, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমরা লিবারাল পার্টির প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী নেতা এবং কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি।”
২০০৮ সালে পার্লামেন্টারি কর্মীদের একটি সমীক্ষায় তাকে তৃতীয় “সবচেয়ে আকর্ষণীয় মহিলা এমপি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই বছর ম্যাক্সিম ম্যাগাজিন তাকে “বিশ্বের সবচেয়ে হট রাজনীতিবিদদের” তালিকায় তৃতীয় স্থান দিয়েছিল।
উদ্যোক্তা হিসেবে ভূমিকা
তিনি “ঢাল্লা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ”-এর সিইও এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চিঠি বিনিময়
মাত্র ১০ বছর বয়সে ঢাল্লা একটি চিঠি লিখে সকলের নজর কাড়েন। এই চিঠিটি তিনি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখেছিলেন। এতে তিনি পাঞ্জাবের অশান্তি এবং অপারেশন ব্লু স্টার নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন।
চিঠিতে ঢাল্লা লিখেছিলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, টিভিতে হিংসা দেখে এবং এতজন শিখকে মরতে দেখে আমি আপনাকে লিখছি। দয়া করে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করুন যাতে শিখরা মারা না যায় এবং গোল্ডেন টেম্পলে আক্রমণ না হয়। হিংসার পরিবর্তে একত্রে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। আশা করি আপনি যত দ্রুত সম্ভব এগুলো সমাধান করবেন।”
ইন্দিরা গান্ধী এই চিঠির জবাব দিয়েছিলেন এবং এক প্রেস কনফারেন্সে এটি উল্লেখ করেছিলেন। গান্ধী ঢাল্লাকে ভারতে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন, তবে তার আগেই গান্ধী নিহত হন।
অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের প্রতিশ্রুতি
লিবারাল পার্টির নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ঢাল্লা মঙ্গলবার ঘোষণা করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের কানাডা থেকে বিতাড়িত করবেন।
একটি পোস্টে ঢাল্লা লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করব এবং মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি।” তার এই ঘোষণা সমর্থন ও সমালোচনা উভয়ই তৈরি করেছে এবং অভিবাসন সংস্কার তার প্রচারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
ঢাল্লা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, কারণ তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে কানাডার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মার্ক কার্নি এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের মতো উচ্চপ্রোফাইলের প্রার্থীদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: Trump on Greenland: গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সেনা পাঠাবেন ট্রাম্প?
ঢাল্লা বলেন, “আমি কানাডার জন্য লড়াই করতে এবং কানাডিয়ানদের হয়ে দাঁড়াতে আগ্রহী। আমি পার্টিকে সাধারণ সদস্যদের হাতে ফিরিয়ে দেব এবং বাস্তবসম্মত সমাধানের মাধ্যমে দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। যদি আপনি প্রকৃত পরিবর্তন চান এবং এমন একজন নেতাকে চান যিনি বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত নন, তাহলে লিবারাল পার্টিতে যোগ দিন এবং আমাকে সমর্থন করুন।”
আগামী ৯ মার্চ লিবারাল পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। যদি লিবারাল পার্টি পরবর্তী ফেডারাল নির্বাচনে জয়ী হয়, তবে ঢাল্লা কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।