ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক বড় রদবদল ঘটল (Russia Taliban Relation)। আফগানিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তালিবানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ গোষ্ঠী হিসেবে আর গণ্য করবে না রাশিয়া, এমনই রায় দিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, এখন থেকে তালিবানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আর কোনও আইনগত বাধা রইল না মস্কোর সামনে।
তালিবানকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা (Russia Taliban Relation)
২০০৩ সালে তালিবানকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল রাশিয়া। সে সময় আফগানিস্তানে চলা সংঘর্ষ, তালিবান-ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলোর সঙ্গে আল কায়দা ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগ এবং তালিবানের চরমপন্থী কর্মকাণ্ডের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রুশ আইনে, এত দিন তালিবানের সঙ্গে যে কোনও রকম যোগাযোগ ছিল ফৌজদারি অপরাধ।
রাশিয়ার নতুন আইন (Russia Taliban Relation)
তবে মাস চারেক আগে রাশিয়ার পার্লামেন্টে পাশ হওয়া একটি নতুন আইন অনুসারে, কোনও গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদী কি না, সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয় রুশ সুপ্রিম কোর্টের হাতে(Russia Taliban Relation)। এরই প্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক এবং বিচার মন্ত্রক যৌথভাবে সুপ্রিম কোর্টে তালিবানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব জমা দেয়। চলতি এপ্রিল মাসের গোড়াতেই প্রসিকিউটর জেনারেলের দফতর ওই প্রস্তাব পেশ করে এবং সুপ্রিম কোর্ট তাতে সায় দেয়।

আরও পড়ুন : US air strikes : আমেরিকার যুদ্ধবিমানের হামলায় কাঁপল ইয়েমেনের রাস ইশা বন্দর! নিহত ৩৮
এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন দিশা (Russia Taliban Relation)
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু রাশিয়া-আফগানিস্তান সম্পর্ক নয়, বরং সমগ্র পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার ভূরাজনীতি-কে নতুন দিশা দেখাতে পারে। একদিকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালিবান এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জ কিংবা অধিকাংশ দেশ থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পেলেও, রাশিয়ার এই অবস্থান তাদের কূটনৈতিক বৈধতা অর্জনের পথে এক বড় ধাপ।

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ (Russia Taliban Relation)
রাশিয়া (Vladimir Putin) এক সময় আফগানিস্তানের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিল। আশির দশকে সোভিয়েত সেনা আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করেছিল, যার জেরে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ ও মার্কিন-পন্থী মুজাহিদিনদের উত্থান ঘটে। ১৯৮৯ সালে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল মস্কো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার ও তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থান বদলাতে শুরু করে।
আরও পড়ুন : India US Relation : মোদীর সঙ্গে ফোন আলাপে মাস্ক! শুল্ক যুদ্ধের মধ্যেই প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার (Russia Taliban Relation)
এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে শুধু তালিবান নয়, সিরিয়ায় বর্তমান শক্তিশালী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর উপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে খবর (Russia Taliban Relation)। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব বলয় আরও বিস্তৃত হতে পারে।তবে সমালোচকরা বলছেন, তালিবানের অতীত কার্যকলাপ, নারী-স্বাধীনতা হরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অপরদিকে, সমর্থকদের মতে, তালিবানের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
তালিবানকে বৈধতা? (Russia Taliban Relation)
যদিও তালিবান এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এটি তাদের পক্ষে এক বড় জয় বলেই ধরে নিচ্ছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। এখন দেখার বিষয়, রাশিয়ার পথ অনুসরণ করে আরও কোনও দেশ তালিবানকে বৈধতা দেয় কি না। আগামী দিনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।