ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে (Russia Ukraine War)—এই মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তুললেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump)। ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে জানান, যুদ্ধ থেমে গেলে ওয়াশিংটন মস্কোর উপর আরোপিত আর্থিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে।
বাণিজ্য-ভিত্তিক শান্তি নীতি (Russia Ukraine War)
ট্রাম্পের বার্তায় স্পষ্ট, তিনি একটি “বাণিজ্য-ভিত্তিক শান্তি নীতি” গ্রহণের পক্ষে(Russia Ukraine War)। তাঁর বক্তব্য, “যুদ্ধবিরতি হলে দু’দেশই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করবে, প্রচুর অর্থ উপার্জন করবে এবং নিজেদের ভাগ্য গড়বে।” এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এই ধরনের বার্তা আশার আলো জাগাচ্ছে, বলছেন অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সুচনা (Russia Ukraine War)
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে শুরু হয় এই সংঘাত (Russia Ukraine War)। ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশে ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয়ে আসছে মস্কো। ডনবাস, লুহানস্ক এবং ক্রাইমিয়া ইতিমধ্যেই রুশ নিয়ন্ত্রণে। বিপরীতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পশ্চিমা দেশগুলির সামরিক সহায়তায় প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লক্ষাধিক। দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও কোনও পক্ষই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির রাস্তায় আসতে চায়নি—এমন অবস্থাতেই ট্রাম্পের মন্তব্য এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

পুতিনের ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ (Russia Ukraine War)
সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, শনিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত অর্থাৎ ইস্টার উপলক্ষে দেড় দিনের যুদ্ধবিরতি পালন করবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। কিন্তু কিয়েভের অভিযোগ, এই সময়সীমার মধ্যেও রাশিয়ার তরফে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, ফলে যুদ্ধবিরতির বাস্তব রূপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের “চলতি সপ্তাহেই চুক্তি”র মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কূটনীতিকদের মতে, এই ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক অভিপ্রায় ও প্রেসিডেন্সি নির্বাচনের প্রচারকৌশল দুই-ই থাকতে পারে।

মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান (Russia Ukraine War)
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে এসেছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিয়ো সম্প্রতি এক মন্তব্যে জানান, “আমরা চাই যুদ্ধটা শেষ হোক, তবে এটা আমাদের যুদ্ধ নয়।” তিনি আরও বলেন, “যদি খুব শীঘ্র কোনও অগ্রগতি না হয়, তবে আমরা এই আলোচনা থেকে সরে আসব।” রুবিয়োর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, ওয়াশিংটনও এখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার পক্ষে নয়। বরং দ্রুত শান্তিচুক্তির পথে হাঁটার জন্য প্রস্তুত, যদিও ইউক্রেনের ভূখণ্ড, বিশেষ করে ক্রাইমিয়ার উপর রাশিয়ার দাবির স্বীকৃতি নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে।
ট্রাম্পের দূতের মধ্যস্থতা (Russia Ukraine War)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সৌদি আরবের রিয়াধে ইতিমধ্যেই তিন দফা বৈঠক করেছেন—আলাদাভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে, এবং একবার ত্রিপাক্ষিকভাবে। এসব বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও চূড়ান্ত চুক্তি এখনও হয়নি।ট্রাম্প শিবির দাবি করছে, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার আগেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চান, যাতে বিশ্ব তাঁকে “শান্তির রাষ্ট্রনেতা” হিসেবে দেখাতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (Russia Ukraine War)
ট্রাম্পের এই ঘোষণা একাধারে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন এবং বিশ্ব রাজনীতির গতি প্রকৃতি—দুয়ের উপরই প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি যদি সত্যিই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, তবে এটি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বিশাল হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।অন্যদিকে, ইউক্রেন এখনও রাশিয়ার আগ্রাসন মেনে নিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, স্থায়ী শান্তি তখনই সম্ভব, যখন রাশিয়া দখল করা এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। ফলে যুদ্ধবিরতি আলোচনার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
জট খুলতে পারে (Russia Ukraine War)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জট খুলতে পারে, তবে এর বাস্তবায়ন বহু চ্যালেঞ্জের মুখে। ইউক্রেনের ভূমি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনও আপস হবে কিনা, সেটাই নির্ধারণ করবে চুক্তির ভবিষ্যৎ। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাসে ব্যক্তিগত কূটনীতি দিয়ে যুদ্ধ থামানোর এমন প্রয়াস খুবই বিরল, তাই ট্রাম্পের ভূমিকা এখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।