ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বহু মাস ধরেই কিয়েভে গুঞ্জন চলছিল—রাশিয়া বড় ধরনের গ্রীষ্মকালীন সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা কব্জা করতে পারে (Russia Ukraine War)। কিন্তু বাস্তবে এই অভিযান এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি, যদিও কিছু অঞ্চলে রুশ বাহিনী উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে।
ডোনেৎস্কে সেনা জোট, কিছু এলাকা দখল (Russia Ukraine War)
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দার সিরস্কি জানিয়েছেন, কেবল ডোনেৎস্কের পোকরভস্ক শহরের কাছেই এখন ১,১১,০০০ রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০টি সংঘর্ষ হচ্ছে (Russia Ukraine War)। গত ডিসেম্বরে সেখানে রুশ সেনার সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০,০০০। উত্তরাঞ্চলের সুমি অঞ্চলে রুশ অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন সিরস্কি। তবে পরিস্থিতি একমুখী নয়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ডোনেৎস্ক ও ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক সীমান্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম ‘জিরকা’ দখল করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় বিশ্লেষক সংস্থা ‘DeepState’ জানিয়েছে, এই অঞ্চলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দ্রুত ভেঙে পড়ছে।
পুতিনের ‘এক জাতি’ তত্ত্ব ও যুদ্ধের নৈতিকতা (Russia Ukraine War)
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Putin) বারবার দাবি করছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার জনগণ একই জাতি এবং ইউক্রেন ‘রাশিয়ার’ অংশ। তাঁর ভাষায়, “যেখানে রুশ সৈন্যের পা পড়ে, সেই ভূমি আমাদের(Russia Ukraine War)।” এই দাবির নেপথ্যে রয়েছে ডোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন সম্পূর্ণ কব্জার চেষ্টা, যদিও লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রুশ দখলে।

আরও পড়ুন: India US Trade Deal : বাণিজ্যচুক্তি না হলে শুল্কের কোপ! ৮ জুলাই ভারতের সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা
ড্রোনের লড়াই, প্রযুক্তি ও কৌশলের যুদ্ধ (Russia Ukraine War)
এই যুদ্ধের একটি নতুন দিক হল ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, ক্রিমিয়ায় একটি রুশ বিমানঘাঁটিতে তারা ড্রোন হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ‘শাহেদ’ ড্রোন ব্যবহার করছে, যার বেশিরভাগই ইরানি প্রযুক্তিতে নির্মিত। কিয়েভ শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
অর্থনৈতিক চাপে রাশিয়া, বাজেট ঘাটতির আশঙ্কা (Russia Ukraine War)
রাশিয়ার যুদ্ধ বাজেট এখন মোট সরকারি ব্যয়ের ৪০%, যা দেশটির জিডিপি-র ৬%(Russia Ukraine War)। এর ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী ম্যাকসিম রেশেতনিকভ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দেশ মন্দার দ্বারপ্রান্তে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এলভিরা নাবিউলিনা জানিয়েছেন, জাতীয় রিজার্ভ ফান্ড প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।পুতিন স্বীকার করেছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হবে এবং আগামী বছর প্রতিরক্ষা ব্যয় কমানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।

লড়াই দীর্ঘমেয়াদী, সমাপ্তির ইঙ্গিত অনিশ্চিত (Russia Ukraine War)
ট্রাম্প প্রশাসনের নীরব ভূমিকা এবং পশ্চিমা আলোচনার স্থবিরতায় যুদ্ধের ইতি টানার সুযোগ ক্ষীণ। যদিও রাশিয়া ইউক্রেনের তুলনায় বিশাল সেনা এবং উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রেখেছে, ইউক্রেনও এখন দ্রুত অস্ত্র উৎপাদনে ঝুঁকছে। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং ছোট ছোট দূর্গে রূপান্তরিত কৌশল—সব মিলিয়ে যুদ্ধ এখন এক জটিল মেরুকরণে রূপ নিয়েছে।