ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ ফের চরমে। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে একটি নতুন শহর দখলের দাবি করল রাশিয়া (Russia Ukraine War)। একইসঙ্গে, গত ২৪ ঘণ্টার ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ১,২৮০ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে নিধন করা হয়েছে বলেও দাবি মস্কোর। মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ডনেৎস্ক অঞ্চলের টলস্টয় শহরকে সম্পূর্ণ ‘মুক্ত’ করেছে রুশ বাহিনী। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি ডনবাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদ, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণে ছিল দীর্ঘদিন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ‘তাস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘কিনঝল’ এবং ড্রোন হামলার সমন্বিত কৌশল। রুশ বাহিনী দাবি করেছে, শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটে চলা কিনঝল মিসাইল ইউক্রেনীয় বাহিনীর পরিকাঠামো ধ্বংসে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
ইউক্রেনের শহরগুলিতে রাতভর বিস্ফোরণ (Russia Ukraine War)
এদিকে, কেবলমাত্র ডনবাস নয়—রাতভর ইউক্রেনের রাজধানী কিভ সহ খারকিভ, নিপ্রো এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলেও দফায় দফায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ সেনা (Russia Ukraine War)। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, অন্তত ৯০টি ড্রোন এবং ৪০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে, যার বেশ কিছু আকাশেই গুলি করে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
তবে কিভ এবং খারকিভে বেসামরিক আবাসন ও একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ এবং জলের পরিষেবা ব্যাহত হয়।
জাতিগত বিভাজন ও ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ (Russia Ukraine War)
ডনবাস, অর্থাৎ ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল মূলত রুশ-ভাষী অধ্যুষিত এলাকা (Russia Ukraine War)। ২০২২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই দুই অঞ্চলকে ‘স্বাধীন প্রজাতন্ত্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তারপর থেকেই রাশিয়া এবং ইউক্রেন—দুই পক্ষের দখলদারি লড়াইয়ে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে এই অঞ্চল।
স্থানীয় রুশপন্থী মিলিশিয়ারা মস্কোর পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক রুশ বিজয়ে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি রুশ সেনার। ডনবাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী চাপে পড়েছে—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।

বাখমুটে ঘেরাটোপের আশঙ্কা (Russia Ukraine War)
রাশিয়ার এই অগ্রগতির প্রেক্ষিতে নতুন করে কৌশলগত চাপে পড়তে চলেছে ইউক্রেন (Russia Ukraine War)। কারণ, ডনবাসের পতন হলে, বাখমুট শহর কার্যত রাশিয়ার ঘেরাটোপে পড়ে যাবে। বাখমুট পূর্ব ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও প্রতীকী শহর, যা দখলের চেষ্টা বহু দিন ধরেই চালাচ্ছে রাশিয়া।

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ (Russia Ukraine War)
মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের (Putin Direct) ঘনিষ্ঠ এক মুখপাত্র জানান, “ডনবাস সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সীমানার অন্তর্গত। আমাদের অভিযান চালিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না অঞ্চল সম্পূর্ণ মুক্ত হয় (Russia Ukraine War)।”এই প্রেক্ষিতে আগামী দিনে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। পশ্চিমা মিত্রদের সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে—এমন ইঙ্গিত মিলছে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। বিশ্লেষকদের মতে, ডনবাসের পতন মানে ইউক্রেনের জন্য এক বড় মনোবল ও কৌশলগত ধাক্কা। এর ফলাফল কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই নজরে বিশ্বের।