ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি এবং কৌশলগত ক্ষমতা আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে (S-500 Air Defence Missile)। রাশিয়ার সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৫০০ ট্রায়াম্ফটর-এম আনার বিষয়ে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। এটি কেবল ভারতীয় সেনার (INDIAN ARMY) অস্ত্রভান্ডারে নতুন সংযোজন নয়, বরং ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে এক অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
বর্তমানে ভারতীয় সেনার হাতে থাকা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ইতিমধ্যেই পাকিস্তান এবং চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বড়সড় সাফল্য এনে দিয়েছে। বিশেষত, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে পাকিস্তান ভারতের ১৫টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর চেষ্টা করলে এস-৪০০ সেই সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগেই ধ্বংস করে দেয়। এই সাফল্যের পরেই ভারতের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আকাশ প্রতিরক্ষা আরও আধুনিকীকরণ করা অপরিহার্য।
এস-৫০০ বনাম এস-৪০০ (S-500 Air Defence Missile)
রাশিয়ার এস-৫০০ ট্রায়াম্ফটর-এম হল এস-৪০০-এর সর্বাধুনিক এবং উন্নত সংস্করণ(S-500 Air Defence Missile)।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- পাল্লা: এস-৪০০-এর সর্বোচ্চ পাল্লা ৪০০ কিমি হলেও এস-৫০০-এর পাল্লা ৬০০ কিমি, যা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানকে অনেক দূর থেকেই ধ্বংস করতে সক্ষম।
- ইন্টার-কন্টিনেন্টাল অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম: এস-৫০০ এমনকি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলও ধ্বংস করতে পারে।
- বহুমুখী লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস: ড্রোন, যুদ্ধবিমান, হাইপারসনিক মিসাইল এবং এমনকি স্যাটেলাইটকেও টার্গেট করতে সক্ষম।
- উন্নত রাডার ব্যবস্থা: এস-৫০০-এর উন্নত ফেজড-অ্যারে রাডার একসঙ্গে শতাধিক লক্ষ্য শনাক্ত করতে পারে।
- দ্রুত প্রতিক্রিয়া সময়: শনাক্ত হওয়ার মিলিসেকেন্ডের মধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
২০২১ সালে রুশ সেনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এস-৫০০। এটি এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার বাইরে কোনো দেশের কাছে সরবরাহ করা হয়নি। ভারতই প্রথম দেশ, যাকে এই প্রযুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার।
প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা (S-500 Air Defence Missile)
এস-৪০০ কেনার সময় ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ উৎপাদন নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল(S-500 Air Defence Missile)। সেই একই নীতি এবার এস-৫০০-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
- প্রযুক্তি হস্তান্তর: DRDO-কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সরবরাহ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
- ভারতীয় শিল্পে উৎপাদন: এস-৫০০-এর কিছু অংশ দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত হতে পারে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ়তা: প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই যৌথ উদ্যোগ ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

আরও পড়ুন: Indian Railways : ভারতীয় রেলে কত জন যাত্রা করেছে গত পাঁচ বছরে? পরিসংখ্যান প্রকাশ করল রেল!
কেন ভারতের জন্য এস-৫০০ গুরুত্বপূর্ণ? (S-500 Air Defence Missile)
১. পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি প্রতিরোধে অপরিহার্য
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তান ভারতের শহরগুলিকে টার্গেট করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল(S-500 Air Defence Missile)। এস-৪০০-এর মাধ্যমে সেই হামলাগুলো ব্যর্থ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান যদি আরও উন্নত মিসাইল ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে ৬০০ কিমি পাল্লার এস-৫০০ ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ঢালকে আরও মজবুত করবে।
২. চীনের হাইপারসনিক মিসাইল মোকাবিলা
চীন বর্তমানে হাইপারসনিক মিসাইল প্রযুক্তি উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করছে। এস-৫০০ এই ধরনের দ্রুতগামী অস্ত্রকেও সঠিকভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।
৩. রাজধানী ও কৌশলগত শহরগুলির সুরক্ষা
দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু বা বিশাখাপত্তনমের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো কৌশলগতভাবে সুরক্ষিত করতে এস-৫০০ অপরিহার্য হবে।
৪. দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা কৌশল
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী ২০-২৫ বছর ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড হিসেবে এস-৫০০ কাজ করবে।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack : অপারেশন “সিঁদুর” থেকে “মহাদেব” সফল, সংসদে দাবি শাহের
ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতে প্রভাব (S-500 Air Defence Missile)
এস-৫০০ কেনার মাধ্যমে ভারত যে লাভবান হবে:
- আকাশ প্রতিরক্ষায় প্রাধান্য: দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত সবচেয়ে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে পাবে।
- প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করা যাবে।
- আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি: এই সিস্টেম কেবল ভারতীয় সেনার ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রভাবও বাড়াবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব (S-500 Air Defence Missile)
এস-৫০০ কেনার সিদ্ধান্ত ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে স্পষ্ট করছে(S-500 Air Defence Missile)।
- মার্কিন চাপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে সবসময়ই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। কিন্তু এস-৪০০ কেনার সময় ভারত তার কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিল। এস-৫০০-এর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হতে পারে।
- রাশিয়ার আস্থা: ভারতকে প্রথম দেশ হিসেবে এই প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়া প্রমাণ করল যে, তারা ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন অধ্যায় (S-500 Air Defence Missile)
রাশিয়ার এস-৫০০ ট্রায়াম্ফটর-এম ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চলেছে। এর ৬০০ কিমি পাল্লার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা, হাইপারসনিক অস্ত্র ধ্বংসের সক্ষমতা এবং উন্নত রাডার প্রযুক্তি ভারতকে পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করাবে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এস-৫০০ কেবল একটি অস্ত্র ব্যবস্থা নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি গেম চেঞ্জার। আগামী দশকে ভারতীয় সেনার শক্তি ও কৌশলগত নিরাপত্তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।