ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০০৩ সালে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে হবু বরকে হত্যা করেছিলেন তরুণী। অপরাধ প্রমাণের পরেও ওই তরুণীর বিরুদ্ধে খুনের সাজা ও গ্রেফতারি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট(SC)।এক অভূতপূর্ব রায়ে শীর্ষ আদালত তাঁকে ৮ সপ্তাহ সময় দিয়েছে কর্ণাটকের রাজ্যপালের কাছে ক্ষমার আবেদন করার জন্য। একইসঙ্গে আদালত এই ঘটনাকে ‘ভুল প্রতিবাদ আর বিভ্রান্ত প্রেমের ফল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ (SC)
২০০৩ সালে শোভা শঙ্কর নামের ওই তরুণী তাঁর বাগদত্তা গিরীশকে হত্যা করেন(SC)। তাঁর প্রেমিক অরুণ এবং আরও দুই সহযোগী, দিনাকরণ ও বেঙ্কটেশের সহায়তায় এই কাণ্ড ঘটান তিনি। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘যদি মেয়েটির পরিবার বিয়ের জন্য চাপ না দিত, তাহলে হয়তো এক তরুণের জীবন রক্ষা পেত।’ শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘কোনও কমবয়সি, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ের কণ্ঠস্বর যদি পরিবার চেপে দেয়, তাহলে তাঁর মনে ভয়ঙ্কর আলোড়ন তৈরি হয়। সেই মানসিক বিদ্রোহ আর বেপরোয়া রোমান্টিকতার জেরেই এক নিরীহ তরুণের মৃত্যু ঘটে। একইসঙ্গে আরও তিনজনের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।’ আদালত আরও বলেছে, ‘অপরাধটি নিঃসন্দেহে জঘন্য হলেও, আমরা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চাই, যাতে অভিযুক্তদের নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ দেওয়া যায়।’

রাজ্যপালকে পরিস্থিতি বিবেচনার আর্জি (SC)
শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ‘আমরা তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে চাই, যাতে তাঁরা সংবিধানের ১৬১ অনুচ্ছেদের আওতায় ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারেন(SC)। আমরা কেবল এটুকু অনুরোধ করব যে, মহামান্য রাজ্যপাল যেন এই বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।’ সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, ‘এই রায় প্রকাশের তারিখ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় দেওয়া হল। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা কর্ণাটকের রাজ্যপালের কাছে উপযুক্ত আবেদন জানাতে পারবেন। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে না এবং তাঁদের সাজা স্থগিত থাকবে।’
আরও পড়ুন-Odisha Bandh: ছাত্রী মৃত্যুতে উত্তাল দেশ! শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ‘ওড়িশা বনধ’
ভুল পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা (SC)
সুপ্রিম কোর্টর কথায়, ‘আমরা আমাদের রায় কেবল দণ্ড ঘোষণায় শেষ করতে চাই না(SC)। এই ঘটনা যে আদতে পারিবারিক ও মানসিক চাপে হয়েছে, সেটাও বিবেচনা করা জরুরি।’ বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ ও অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ আরও বলেছে, ‘অবশ্যই, আমরা তাঁর কার্যকলাপকে সমর্থন করতে পারি না কারণ একটি নিরীহ প্রাণ চলে গেছে। কিন্তু আমরা বুঝি, মেয়েটি ভুল পথে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল।’ শোভা ছিলেন ওই মামলার চতুর্থ আসামি। তাঁর জীবনের পরিস্থিতি ও সামাজিক পটভূমি বিবেচনা করে আদালত ক্ষমার জন্য আবেদন জানাতে সুযোগ দিয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ আবেগতাড়িত কর্মকাণ্ড (SC)
২০০৩ সালের সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের অনেকেই ছিলেন কিশোর(SC)। আদালত জানিয়েছে, ‘যে সময় অপরাধটি ঘটেছিল, দুই অভিযুক্ত কিশোর এবং শোভা সদ্য কৈশোর পেরিয়ে এসেছিলেন। তৃতীয় অভিযুক্ত ছিলেন ২৮ বছরের সদ্য বিবাহিত ব্যক্তি, যার একটি সন্তানও ছিল।’বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘তাঁরা জন্মগতভাবে অপরাধী নন। ভুল সিদ্ধান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ আবেগতাড়িত কর্মকাণ্ড তাঁদের এই অবস্থায় এনেছে। বন্দিজীবনে তাঁদের আচরণও নেতিবাচক নয়।’
