ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ‘এভাবে মামলা দায়ের করাই উচিত হয়নি।’ নগদকাণ্ডে কাঠগড়ায় ওঠা এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার দায়ের করা মামলা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট(Justice Yashwant Varma’s petition)। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মা। বস্তুত, ওই আবেদন শীর্ষ আদালতের ত্রিসদস্য ইন-হাউস তদন্ত প্যানেলের রিপোর্ট অগ্রাহ্য করার দাবি করেছে।
কজলিস্টে মামলা তালিকাভুক্ত (Justice Yashwant Varma’s petition)
সোমবারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কজলিস্টে মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়েছে ‘এক্সএক্সএক্স বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ নামে(Justice Yashwant Varma’s petition)। এখানে ‘এক্সএক্সএক্স’ আসলে বিচারপতি ভর্মাকে নির্দেশ করছে। তিনি আবেদন করেছেন, যাতে তাঁর নাম জনসমক্ষে প্রকাশ না পায় এবং পরিচয় গোপন রাখা হয়।আইনি জগতে ‘এক্সএক্সএক্স’ পরিচয় গোপন রাখার পরিচিত একটি পদ্ধতি হলেও সাধারণত এটি ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের শিকার ব্যক্তি, কিশোর বা নাবালকদের মামলায় ব্যবহৃত হয়। এই প্রেক্ষিতে একজন হাইকোর্টের বিচারপতির পক্ষে এই পন্থা নেওয়া যথেষ্ট ব্যতিক্রমী।ওই মামলা থেকে আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। তারপর মামলাটি যায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ্র বেঞ্চে।

কেন তদন্ত রিপোর্ট মামলার নথিতে নেই? (Justice Yashwant Varma’s petition)
সোমবার দুই বিচারপতি বেঞ্চ প্রশ্ন করে, কেন তদন্ত রিপোর্টটি মামলার নথিতে নেই? এরপরেই জবাবে আইনজীবী কপিল সিবল জানান, ওই নথি চাইলে যে কেউ দেখতে পারেন (Justice Yashwant Varma’s petition)। পাল্টা বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘তবুও মামলার নথির সঙ্গে সেটি থাকা জরুরি ছিল।’ এদিন শুনানিতে একজন বিচারপতির অপসারণ নিয়ে সংবিধানের নিয়মকানুনও তুলে ধরেন আইনজীবী সিবল। তিনি বলেন, বিচারপতি ভর্মার বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ম মেনে হয়নি। তাঁর কথায়, ‘যতক্ষণ না কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই ধরনের বিষয় নিয়ে সংসদেও আলোচনা করা যায় না। এভাবে জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, সংবাদমাধ্যমে প্রচার সমস্ত কিছুই নিষিদ্ধ। এই ধরনের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ের লঙ্ঘন করা।’
কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন (Justice Yashwant Varma’s petition)
সিবল বলেন যে আউটহাউসে যে নগদ টাকা পাওয়া গেছে, তা বিচারকের উপর কীভাবে আরোপ করা যেতে পারে(Justice Yashwant Varma’s petition)। তখন বিচারপতি দত্ত বলেন,পুলিশ, কর্মীর সবাই ছিল এবং সেখানে নগদ টাকা পাওয়া গেছে।’ এরপর সিনিয়র আইনজীবী উত্তর দেন, বিচার বিভাগের কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এরপরেই বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন করেন, সিবল কি বলতে চাইছেন যে কমিটির রিপোর্টের কোনও মূল্য নেই। সিবল উত্তর দেন, ‘না, তা নয়।’ তারপরেই বিচারপতিদের বক্তব্য, যখন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তখন কেন আপত্তি তোলা হয়নি? জবাবে সিবল জানান, বিচারপতি ভর্মা তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতে চেয়েছিলেন, উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ কার। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী বুধবার।

ঘটনার সূত্রপাত (Justice Yashwant Varma’s petition)
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায় (Justice Yashwant Varma’s petition)। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।
