ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মঙ্গলে প্রাণ রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে গবেষণা বহু পুরনো (Life on Mars)। এই গবেষণায় কেটেছে বহু বছর। এবার এল নতুন প্রযুক্তি। এর সাহায্যে দ্রুততর হবে এই গবেষণা এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলে মাইক্রোবিয়াল জীবাশ্ম শনাক্তের জন্য নতুন লেজার (Life on Mars)
বিজ্ঞানীরা এমন একটি নতুন লেজার প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা মঙ্গলের পাথরের ভেতর লুকিয়ে থাকা মাইক্রোবিয়াল জীবাশ্ম খুঁজে বের করতে পারবে (Life on Mars)। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এই লেজার ডিভাইস মঙ্গলের জিপসাম (gypsum) স্তর পরীক্ষা করবে, যেখানে অতীত জীবনের চিহ্ন থাকতে পারে। এই ডিভাইসটি ইতিমধ্যেই আলজেরিয়ার মঙ্গলের মতো পরিবেশে থাকা জিপসামের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে।
গবেষণা কী বলছে? (Life on Mars)
এই গবেষণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা “ফ্রন্টিয়ার্স ইন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেস” নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে (Life on Mars)। গবেষণার শিরোনাম, “প্রাচীন মঙ্গলে জীবনের সন্ধান: মেসিনিয়ান জিপসামে মাইক্রোফসিল শনাক্তকরণের বিশ্লেষণ”।
কী বলছেন গবেষকরা?
গবেষণার প্রধান লেখক এবং সুইজারল্যান্ডের বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার গবেষক ইউসেফ সেল্লাম বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, কীভাবে মঙ্গলের সালফেট খনিজ পদার্থে জীবনের চিহ্ন খোঁজা যেতে পারে। এটি ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানের জন্য দিকনির্দেশ দেবে।”
আরও পড়ুন: Beaches found on Mars: মঙ্গলে সমুদ্র! নতুন গবেষণায় মিলল প্রাচীন সৈকতের প্রমাণ
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লেজার অ্যাব্লেশন আয়নাইজেশন ম্যাস স্পেকট্রোমিটার, যা একটি মহাকাশ-উপযোগী যন্ত্র, সালফেট খনিজে বায়োসিগনেচার সনাক্ত করতে পারে। এটি ভবিষ্যতের মঙ্গল রোভার বা ল্যান্ডারে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সরাসরি মঙ্গলের মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করবে।”
মঙ্গলে অতীত জীবনের সন্ধান
NASA-র পাঠানো Curiosity রোভার দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গলের Gale গহ্বরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সেখানে প্রাচীন হ্রদ ও নদীর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে Perseverance রোভার Jezero গহ্বর পরিদর্শন করছে, যা একসময় একটি বিশাল হ্রদ ছিল বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরা এখনও প্রাচীন জীবাশ্মের সরাসরি প্রমাণ পাননি, তবে তারা আশাবাদী।
Curiosity রোভার মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস শনাক্ত করেছে, যা মাইক্রোবিয়াল জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন হতে পারে। এছাড়াও, মঙ্গলের পাথরে জৈব অণুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা জীবনের অন্যতম মৌলিক উপাদান।
মঙ্গলে জীবাশ্ম কোথায় খুঁজতে হবে?
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলের জলাশয় শুকিয়ে গিয়েছিল। জিপসাম খনিজ মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে। এটি তখন তৈরি হয়, যখন ছোট জলাশয় শুকিয়ে যায়। জিপসাম জীবাশ্ম সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই খনিজের স্তরে প্রাচীন জীবনের চিহ্ন লুকিয়ে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: Mahashivratri 2025: মহাশিবরাত্রিতে ৬০ বছর পর এক বিরল শুভ যোগ, ভাগ্য খুলছে কাদের?
সেল্লাম বলেন, “জিপসাম দ্রুত তৈরি হয় এবং ব্যাকটেরিয়া বা অন্য জীবকে পচনশীল হওয়ার আগেই আটকে ফেলতে পারে। এটি জৈবিক কাঠামো ও রাসায়নিক চিহ্ন সংরক্ষণে সক্ষম।”
পৃথিবীতে পরীক্ষার ফল কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা একটি ছোট লেজার চালিত ম্যাস স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করেছেন, যা নমুনার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে পারে মাইক্রোমিটারের গভীরতায়।
তারা আলজেরিয়ার Sidi Boutbal খনিতে পাওয়া জিপসাম সংগ্রহ করেন এবং ম্যাস স্পেকট্রোমিটার ও অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বিশ্লেষণ করেন। এই গবেষণায় কীভাবে প্রকৃত জীবাশ্ম ও সাধারণ শিলার গঠন আলাদা করা যায়, তার জন্য বিশেষ বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মঙ্গলের মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রাণের চিহ্ন খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।