Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (Sco) সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (PUTIN) মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে(Sco Summit 2025)। দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক পুনর্বিবেচনা করেন এবং আগামী দিনের সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত (Sco Summit 2025)
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ় হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রসার ঘটেছে বিশেষভাবে জ্বালানি ক্ষেত্রে(Sco Summit 2025)। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে চলেছে, যা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদী ও পুতিন বৈঠকে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে কৃষি, প্রযুক্তি এবং ওষুধ শিল্পেও পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভারতের জন্য রাশিয়া শুধুই এক কৌশলগত অংশীদার নয়, বরং একটি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য সহযোগী। ২০২৩ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি। এই বৈঠকে সেই সংখ্যাকে আগামী কয়েক বছরে দ্বিগুণ করার বিষয়ে দুই পক্ষই আশাবাদী বলে জানানো হয়েছে।
জ্বালানি ও মহাকাশ খাতে গভীর সহযোগিতা (Sco Summit 2025)
জ্বালানি খাতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের(Sco Summit 2025)। কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এর অন্যতম উদাহরণ। বৈঠকে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের নতুন প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়েও আলোচনা হয়। এছাড়া তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকে আরও দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
একইসঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতা এক নতুন মোড় নিতে চলেছে। চন্দ্রযান ও গগনযান প্রকল্পে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রসঙ্গ বৈঠকে উঠে আসে। পুতিন উল্লেখ করেন, মহাকাশ অভিযানে ভারত-রাশিয়া সহযোগিতা ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন : India US Relations : এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মাঝেই ভারত-মার্কিন “অটুট বন্ধুত্ব”-এর বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা (Sco Summit 2025)
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের অন্যতম শক্তিশালী দিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা(Sco Summit 2025)। ভারতীয় সেনার জন্য রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন এবং মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করে আসছে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বিশেষ করে ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের প্রসঙ্গ উঠে আসে, যা ভারতীয় আকাশসীমাকে নিরাপত্তা দেবে। এছাড়া যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনের পরিকল্পনাও আলোচনায় স্থান পায়, যাতে ভারতীয় শিল্পক্ষেত্র লাভবান হবে এবং দেশীয় উৎপাদন আরও শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন : SCO Summit 2025 : এসসিও সম্মেলনে পাহলগাম জঙ্গি হামলার নিন্দা, বড় কূটনৈতিক জয় ভারতের
কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও আঞ্চলিক ভারসাম্য (Sco Summit 2025)
প্রধানমন্ত্রী মোদী (Narendra Modi) বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেন, ভারত-রাশিয়ার “বিশেষ ও সুবিধাজনক কৌশলগত অংশীদারিত্ব” শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার অন্যতম স্তম্ভ। এই অংশীদারিত্ব দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং ইউরেশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তিত চিত্রে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ভারতের অবস্থান (Sco Summit 2025)
বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ(Sco Summit 2025)। প্রধানমন্ত্রী মোদী শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন এবং বলেন, ‘‘সংলাপ ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতের অবস্থানকে সম্মান জানিয়ে বলেন, রাশিয়া ভারতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়।
এই অবস্থান ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্যেরই প্রতিফলন, যেখানে একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব বজায় রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
চীন-ভারত-রাশিয়া ত্রিপাক্ষিক আলাপ(Sco Summit 2025)
এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে এক বিরল মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী মোদী, প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে (XI JINPING) একসঙ্গে হেঁটে ও আলাপচারিতায় দেখা যায়(Sco Summit 2025)। এই দৃশ্যকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার জন্য এই ত্রিপাক্ষিক সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও প্রাসঙ্গিকতা
উল্লেখযোগ্যভাবে, মোদী-পুতিন বৈঠকের কিছু সময় আগেই ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “ভারত-আমেরিকা স্থায়ী বন্ধুত্ব” নিয়ে একটি বার্তা প্রকাশ করে(Sco Summit 2025)। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি ছিল এক ধরনের কূটনৈতিক বার্তা, যেখানে ওয়াশিংটন নয়াদিল্লিকে পাশে রাখার প্রয়াস দেখিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং ভারতীয় রপ্তানির উপর শুল্ক আরোপ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
বৈঠকের তাৎপর্য(Sco Summit 2025)
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, মোদী-পুতিন বৈঠক শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বিশ্ব রাজনীতির জটিল প্রেক্ষাপটে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
বাণিজ্য, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে যে বহুমুখী সহযোগিতার বার্তা এই বৈঠকে উঠে এসেছে, তা ভবিষ্যতে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে ভারতের শান্তির আহ্বান বৈশ্বিক মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।