ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের গর্ব শুভাংশু শুক্লা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station) অবস্থান করছেন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অভিযানে(Shubhanshu Shukla)। কিন্তু মিশনের সমাপ্তির পর তাঁর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াটি একেবারেই সহজ নয়। এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট, জটিল কিন্তু পরিকল্পিত প্রক্রিয়া। কীভাবে শুভাংশু শুক্লা স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন?
ধাপ ১: রিটার্ন উইন্ডো নির্বাচন ও প্রস্তুতি (Shubhanshu Shukla)
মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বেছে নেওয়া হয়, যাকে বলা হয় “return window”।
- পৃথিবীর আবহাওয়া, কক্ষপথের গতি ও পজিশন যাচাই করে এই সময় নির্ধারিত হয়।
- নভোচারী ও গ্রাউন্ড কন্ট্রোল (মিশন কন্ট্রোল সেন্টার) যৌথভাবে সবুজ সংকেত দিলে ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়।
ধাপ ২: স্পেসক্রাফটে প্রবেশ (Shubhanshu Shukla)
শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর সহ-অভিযাত্রীরা ISS থেকে তাদের রিটার্ন ক্যাপসুল (যেমন: SpaceX Dragon বা Soyuz)–এ প্রবেশ করবেন(Shubhanshu Shukla)।
- প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পোশাক (space suit) পরে নেবেন।
- কন্ট্রোল চেক, অক্সিজেন ও কমিউনিকেশন পরীক্ষা হবে।
- এরপর ধাপে ধাপে “undocking” প্রক্রিয়া শুরু হবে, অর্থাৎ ISS থেকে স্পেসক্রাফট বিচ্ছিন্ন হবে।
ধাপ ৩: ISS থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া (Shubhanshu Shukla)
- একটি নির্দিষ্ট সময় ও কক্ষপথে পৌঁছলে স্পেসক্রাফট ধীরে ধীরে ISS থেকে আলাদা হবে(Shubhanshu Shukla)।
- এটি পুরোপুরি অটোমেটেড হলেও, নভোচারীরা এটি মনিটর করেন।
- আলাদা হওয়ার পর ক্যাপসুল পৃথিবীর অভিমুখে গতি নেয়।

আরও পড়ুন: US Trade Deal : ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি! বন্ধুদের উপর শুল্ক, ভারতের সঙ্গে এখনও চুক্তি অধরা
ধাপ ৪: ডিঅরবিট বার্ন (Shubhanshu Shukla)
- এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
- ক্যাপসুলের ইঞ্জিন নির্দিষ্ট কোণে জ্বলে ওঠে, যাতে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার গতি ও কোণ নির্ধারণ করা যায়।
- এই বার্ন শেষ হওয়ার পর থেকেই ফেরার প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়।
ধাপ ৫: বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ (Shubhanshu Shukla)
- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় তীব্র ঘর্ষণে ক্যাপসুলের বাইরের তাপমাত্রা প্রায় ১৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।
- এই সময় heat shield নভোচারীদের রক্ষা করে।
- ক্যাপসুলের গতি ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে।
ধাপ ৬: প্যারাসুট সিস্টেম খোলা (Shubhanshu Shukla)
- পৃথিবীর কাছাকাছি এসে ক্যাপসুলে থাকা প্যারাসুট একের পর এক খুলে যায়:
১. Drogue parachute (ধীরে করার প্রাথমিক ব্যবস্থা)
২. Main parachute (মূলভাবে নামার জন্য) - এটি ক্যাপসুলের গতি আরও কমিয়ে দেয় এবং স্থিতিশীল করে।

ধাপ ৭: ল্যান্ডিং / স্প্ল্যাশডাউন (Shubhanshu Shukla)
- রিটার্ন ক্যাপসুল দুই রকমভাবে নামতে পারে,
১. জলে (Splashdown) – যেমন SpaceX Dragon, আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগরে নামে।
২. মাটিতে (Hard landing with soft landing gear) – যেমন রাশিয়ান Soyuz ক্যাপসুল কাজাখস্তানে নামে। - ক্যাপসুল নামার সঙ্গে সঙ্গেই রেসকিউ টিম হেলিকপ্টার ও বোট নিয়ে সেখানে পৌঁছয়।
ধাপ ৮: উদ্ধার ও চিকিৎসা পরীক্ষা (Shubhanshu Shukla)
- শুভাংশু শুক্লাকে ক্যাপসুল থেকে বের করে আনা হবে।
- প্রথমে তাঁকে বসিয়ে রাখা হবে, কারণ মহাকর্ষে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগে।
- চিকিৎসক দল তাঁর রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, ভারসাম্য, হাড়ের ঘনত্ব ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন।
ধাপ ৯: দেশে প্রত্যাবর্তন ও ব্রিফিং (Shubhanshu Shukla)
- এরপর তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে দেশে – বিশেষ বিমানে করে।
- দেশে ফেরার পর হবে একটি “ডি-ব্রিফিং” সেশন, যেখানে তিনি তাঁর মিশনের অভিজ্ঞতা জানাবেন গবেষণা দলকে।
- এরপর কিছুদিন পুনর্বাসন (rehabilitation) প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে, যাতে শরীর ফের পৃথিবীর পরিবেশে মানিয়ে নেয়।
সব কিছু ঠিক থাকলে শুভাংশু-রা ১৫ ই জুলাই ভারতীয় সময় বিকেল ৩ টে ১মিনিটে ক্যালিফোনিয়া উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে নামবে ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে। শুভাংশু শুক্লার পৃথিবীতে ফিরে আসা একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক প্রক্রিয়া। প্রতিটি ধাপে রয়েছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিখুঁত মেলবন্ধন। এই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই এক একজন নভোচারীর মহাকাশ অভিযানের পূর্ণতা ঘটে – এবং শুরু হয় নতুন গবেষণার সম্ভাবনা। এ এক মহাকাব্যের মতো যাত্রা — মাটির মানুষ থেকে মহাকাশচারী হয়ে ফের মাটিতে ফেরা!