ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ১৮২৪ সালের (Special Perfume Shop) কথা। সেই সময় লখনউয়ের তিন তরুণ ব্যবসায়ী একসঙ্গে মিলে নতুন কিছু শুরু করার স্বপ্ন দেখছিলেন। নানা ব্যবসার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের মন স্থির করল একটি বিশেষ শিল্পে—আতর ব্যবসায়। তখনকার দিনে আতর কেবল গন্ধের উপকরণই নয়, একটি সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হত। সেই বিশ্বাস আর সাহস নিয়ে এই তিন যুবক কলকাতার চিৎপুর এলাকায় গিয়ে স্থাপন করলেন তাদের আতরখানা। দোকানের নাম দিলেন “হাজি খুদা বুখস নবি।”
বাতাসে মিশে আছে এই আতরখানার ঘ্রাণ (Special Perfume Shop)
চিৎপুরের সেই ছোট্ট আতরখানাটি আজও রয়েছে, যেখানে সারি সারি ছোট (Special Perfume Shop) ছোট বোতলে সাজানো থাকে নানা প্রকার সুগন্ধী। প্রতিটি বোতল যেন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে এক ধ্রুপদী ইতিহাসের গল্প। সেই সময়ের বাতাবরণ, মানুষের চলাফেরা, কলকাতার রঙিন জীবন—সবকিছু যেন বাতাসে মিশে আছে এই আতরখানার ঘ্রাণে।
নিয়মিত আতর কিনতে আসতেন (Special Perfume Shop)
বহু বছর আগে, সেই দোকানে নিয়মিত আতর কিনতে আসতেন দেশের (Special Perfume Shop) গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে মোতিলাল নেহেরু; সবাই তাদের পছন্দের সুগন্ধির জন্য এখানে আসতেন। শুধু তাই নয়, এই দোকান থেকে মাসের শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরবাড়িতে আতর পাঠানো হত নিয়মিত। বলাই বাহুল্য, রবিঠাকুর নিজেও এই সুগন্ধি পছন্দ করতেন এবং প্রায়শই আসতেন তাদের কাছে।
আতরখানার খ্যাতি ছিল অপরিসীম
আর মাত্র এতটুকুই নয়, নজরুল ইসলামও ছিলেন এই আতরখানার নিয়মিত গ্রাহক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পরবর্তীতে এখানে আসতেন বলে শোনা যায়। কলকাতা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন সামাজিক মহলে এই আতরখানার খ্যাতি ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে শহরের রাতের মহফিল ও জমকালো অনুষ্ঠানগুলোতে হাজিরা দেয়ার আগে, বাবুরা এই আতরখানার দরজায় ভিজিট করতেন, যেন তাদের সাজগোজ হয় সম্পূর্ণ এবং নিখুঁত।
সুন্দরগন্ধে ঘেরা সেই দোকানটি কেবল আতর বিক্রির জায়গা ছিল না, বরং এটি ছিল সামাজিক বন্ধনের এক অদৃশ্য সেতু। অনেকেই তাদের প্রিয়জনের জন্য খুঁজে নিতেন একেবারে অনন্য গন্ধের বোতল। এটা ছিল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। আবার ভাবতে হয়, কী অসাধারণ সাহস ছিল সেই তিন লখনউয়ের যুবকের! নিজেদের শহর থেকে দূরে এসে, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে, নতুন ব্যবসায় হাত দিতে তারা কতটা দৃঢ় ছিল। তাঁদের সেই উদ্যোগ আজও চিৎপুরের গলি গুলোকে সুগন্ধে ভরিয়ে রাখে, যেন সময় থেমে গেছে।
আজও যদি চিৎপুরের সেই সুগন্ধী দোকানে যাওয়া হয়, তাহলে শোনা যায় ঐতিহাসিক কাহিনী আর অতীতের গন্ধ। এই আতরখানার প্রতিটি বোতলে যে গল্পগুলো লুকিয়ে আছে, তা শুধুমাত্র গন্ধ নয়, ইতিহাসকেও জীবন্ত রাখে।