ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চা বাগান থেকে সোজা ফুটবলের ময়দান। আর্থিক অভাব-পিছুটানকে পিছনে ফেলে স্বপ্নের পথ পাড়ি জলপাইগুড়ির বর্ষার। আর্থিক অভাব বার বার মনে করিয়ে দেয় স্বপ্ন না দেখার কথা। কিন্তু বর্ষা, তাঁর ইচ্ছে, পরিশ্রম, অধ্যাবসায় দিয়ে আজ হারিয়েছে ‘অভাব’ নামের বাঁধাকে (Success Story)। পায়ের জাদু দেখাতে এবার মধ্যপ্রদেশে ফুটবল খেলায় ইন্ডিয়ান মহিলা লিগের মাঠে পাড়ি দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) চা বাগান সংলগ্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে বর্ষা ওরাঁও।
জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে স্বপ্নপূরণের পথে এগোনো যায়, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) সদর ব্লকের ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের বর্ষা ওরাওঁ (Barsha Oraon)। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের মেয়ে হয়েও বর্ষা আজ নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে (Indian Women’s League) । শুক্রবার, মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও মিহির কর্মকার বর্ষাকে সংবর্ধনা জানান এবং খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।

বর্ষার গল্পের শুরু (North Bengal)
জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের এক অচেনা গল্পের শুরু এভাবেই! চা বাগান অনুষ্ঠিত এলাকার বর্ষা অসম্ভব ফুটবলপ্রেমী। যার কল্পনায় ফুটবলের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা ও স্বপ্ন (Success Story)। ছোটবেলায় দিদির ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে তারও মনে ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা, অভাবের কারণে দিদিকে মাঠ ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। সেই থেকেই বর্ষার মনে ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার প্রবল আগ্রহ জন্ম নেয়। (North Bengal) তবে সে জানতো, যদি তার স্বপ্ন সত্যি করতে হয়, তবে তাকে নিজেই কিছু করতে হবে। সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্জেন্টিনার মেসির ফুটবল খেলার বিভিন্ন ক্লিপিং দেখে শিখতে শুরু করে। বাড়ির এক কোণায় বসে মেসির পায়ের কারিগরি রপ্ত করতে থাকে, আর মাঠে গিয়ে সেগুলো অনুশীলন করে।
পরে খোঁজ মেলে এলাকারই ফুটবল কোচ অমিতের। কোচের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতে অমিত বুঝতে পারেন, বর্ষার মধ্যে এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল রয়েছে। অমিত তাকে মাঠে নিয়মিত অনুশীলনের পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে তার স্বপ্নপূরণের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় (Success Story)। তারপর বর্ষাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একদিকে, চা বাগানের কঠোর কাজকর্ম, অন্যদিকে স্বপ্ন পূরণের অদম্য প্রচেষ্টা চলতে থাকে তাল মিলিয়ে। জমানো টাকা থেকেই ফুটবলের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে চলতো প্রস্তুতি।
শেষমেশ, তার কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদিত মনোভাব তাকে নিয়ে যায় ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্ডিয়ান মহিলা প্রিমিয়ার লীগে (Indian Women’s League) , যেখানে সে নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছে। বর্ষার এই যাত্রা প্রমাণ করে, যেখানে অদম্য ইচ্ছা সেখানে উন্মোচিত হয় নয়া পথ!